বুধবার শীতকালীন অধিবেশনের জিরো আওয়ার চলাকালীন হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নতুন সংসদ ভবন। গ্যালারি থেকে আচমকা লোকসভায় লাফ দিয়ে পড়েন দুই অজ্ঞাতপরিচয় তরুণ। তাঁদের হাতে ধরা টিনের কৌটা থেকে বের হলো হলুদ রঙের ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ায় ভরে গেলে লোকসভা। তাঁদের মুখে স্লোগান, ‘তানাশাহি নেহি চলেগি’ (স্বৈরতন্ত্র চলবে না)। স্বাভাবিকভাবেই হতবাক সবাই। সঙ্গে সঙ্গে মুলতবি করে দেওয়া হয় সভার কাজ। সংসদ ভবনের নিরাপত্তায় এত বড় ত্রুটির পরে আততায়ীদের পাশাপাশি আঙুল উঠছে বিজেপি সাংসদের দিকেও। প্রতাপ সিমহার দেওয়া সুপারিশপত্র নিয়েই সংসদে ঢুকেছিল দুই আততায়ী। এবার এপ্রসঙ্গে সরব হলেন খোদ বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। গতকাল সংসদের লাইব্রেরিতে বসে কিছু নথি দেখছিলেন তিনি। সকালে নতুন সংসদ ভবনে গেলেও, লোকসভা কক্ষে তখনও ঢোকেননি তিনি। কিছু নথি দেখা, তার পরে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে ভেবেছিলেন। হঠাৎই চেঁচামেচি শুনে লাইব্রেরি ছেড়ে বেরিয়ে বুঝতে পারেন, লোকসভা কক্ষে ঢুকে পড়েছে কোনও এক বহিরাগত। বাইরে আরও দু’জন বহিরাগত ধোঁয়া-বোমা ছুড়েছে বলেও শুনতে পান। সাংসদ জানান, ‘‘আরে, যে গ্যালারি থেকে ওই বহিরাগত লাফিয়ে নেমেছিল, তার সামনেই আমরা বসি। অর্থাৎ, আমার আসনের উপরেই সেই গ্যালারি। আমি ভবনে থাকলে হয়তো আমার ঘাড়ের উপরেই এসে পড়ত।”
পাশাপাশি, তাঁর প্রশ্ন, “সংসদে এত নিরাপত্তা, তার পরেও কী ভাবে বহিরাগতরা ঢুকে পড়ে এমন কাণ্ড করল কী করে!” উল্লেখ্য, সংসদ হামলার ২২ বছর পূর্তির দিনে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে ফিরিয়ে এনেছে আতঙ্কের স্মৃতি। বিষয়টি নিযে রাজনৈতিক দোষারোপ, দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা বিবৃতি দিয়েছেন। কংগ্রেসের তরফেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ মূলত সংসদের নিরাপত্তার দেখভালের দায়িত্বে। দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের রাশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে। স্বভাবতই বিরোধীদের আক্রমণের নিশানা হয়েছে বিজেপি। সাংসদেরা আতঙ্কিত বলে বিরোধীরা দাবি করেছেন। এই আবহে সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদও। তবে তিনিও আতঙ্কিত কিনা জানতে চাইলে চিকিৎসক সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, “এটা ঠিকই যে, এত নিরাপত্তা সত্ত্বেও ঘটনাটি চমকে দিয়েছে। সংসদে হামলার বর্ষপূর্তি নিয়ে কারা যেন হুমকি দিয়েছে বলে শুনেছিলাম। তার পরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল, সে কথাও সত্যি। সারা বছর যেমন নিরাপত্তা থাকে গত কয়েকদিন ধরে তার চেয়ে নিরাপত্তা বেশি ছিল। তার পরেও এমন ঘটনা ঘটা উচিত ছিল না। তবে আতঙ্কিত নই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যথেষ্ট শক্তিশালী। আতঙ্কের কোনও কারণই নেই।” ঘটনার পরেও বিকেল পর্যন্ত সংসদেই ছিলেন জলপাইগুড়ির সাংসদ। “ঘটনার পরে কিছুক্ষণ অধিবেশন চলেছিল। তার পরে স্থগিত করে দেন স্পিকার। স্পিকারের সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে, উনি আশ্বাস দিয়েছেন”, জানিয়েছেন জয়ন্তবাবু।