বিজেপি যেমনটা চেয়েছিল, হলও ঠিক তাই। বিরোধীদের কোনও কথাই কানে তুললেন না স্পিকার। এবং শেষমেশ লোকসভা থেকে বরখাস্ত করা হল কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। মহুয়ার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন তোলার যে অভিযোগ ছিল তা খতিয়ে দেখে অনেক আগেই এথিক্স কমিটি তাদের সুপারিশ জানিয়ে দিয়েছিল। সেই সুপারিশে মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের কথা বলা হয়েছিল। শুক্রবার এথিক্স কমিটির সেই সুপারিশ লোকসভায় পেশ করার পর তা নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য বিতর্ক হয়। এর পরই সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর আনা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি করে লোকসভা থেকে মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার প্রস্তাবে সিলমোহর দেন স্পিকার ওম বিড়লা।
প্রসঙ্গত, মহুয়া বিরুদ্ধে প্রথমবার অভিযোগ তোলা হয়েছিল অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখ নাগাদ। তার পর আড়াই মাসের মধ্যে এথিক্স কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে যেভাবে তাঁকে বহিষ্কার করা হল, এত তড়িঘড়ি সম্ভবত আগে কখনও ঘটেনি। এদিন সংসদে দুপুর ১২টায় এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ হয়। তার পর দুপুর ২টোতেই ওই রিপোর্টের উপর আলোচনা শুরু করে দেন স্পিকার। এ ব্যাপারে বলতে উঠে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, স্যার কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে কি সম্ভব, দু’ঘণ্টার মধ্যে ৪৯৫ পৃষ্ঠার রিপোর্ট পড়ে ফেলা! মহুয়া মৈত্রকে এভাবে সংসদ থেকে বহিষ্কার করার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অধীর।
তাঁর কথায়, মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে কোনও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তার আগেই তাঁকে শাস্তি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অধীর আরও বলেন, দেশের ন্যায়ালয়গুলিতেও মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্তদের বলতে সুযোগ দেওয়া হয়। আমি অনুরোধ করব মহুয়া মৈত্রকেও বলার সুযোগ দেওয়া হোক। নতুন সংসদ ভবনকে কলঙ্কিত হতে দেবেন না। কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, ৩১ বছর হয়ে গিয়েছে আইনজীবী হিসাবে। অনেক সময়ই তাড়াহুড়ো করতে হয়। কিন্তু এই প্রথম রিপোর্ট না দেখেই আলোচনায় অংশ নিচ্ছি। ১২টায় রিপোর্ট পেশ করে ২টো সেই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। অধীরজির কথার সূত্র ধরেই বলছি, একটু সময় দিলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না। একটি পার্টি কী সুপারিশ করতে পারে কার সাংসদ পদ থাকবে? অভিযুক্তকে তাঁর বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে?
তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কমিটির রিপোর্ট সঠিক নয়। আগেই রিপোর্ট ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের বক্তা হিসাবে মহুয়া মৈত্রকে বলার সুযোগ দেওয়া হোক।’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পক্ষপাতমুক্ত বিচার হয়নি। আমরা যখন কোনও ব্যক্তির ভবিতব্য় বিচার করি, তখন আমরা বিচারকের ভূমিকায় থাকি। আমরা আইনানুযায়ী দাবি জানাচ্ছি মহুয়া মৈত্রকে বলার সুযোগ দেওয়া হোক।’ কল্যাণের দাবি, ‘দর্শন হিরানন্দানি অভিযোগ এনেছেন মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ সামনে এনেছেন জয় অনন্ত দেহদ্রাই। সঙ্গে টেনে এনেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেকে। কিন্তু দর্শন হিরানন্দানিকে প্রশ্ন করার জন্য ডাকাই হয়নি। যিনি অভিযোগ এনেছেন, তাঁর বয়ানই গ্রহণ করা হল না। এটা আইন বিরুদ্ধ। সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারাতেও এর উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধান ভাঙা হচ্ছে।’