আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের অস্বস্তি বাড়ল বঙ্গ বিজেপি শিবিরে। বিগত ২০১৯ সালে ভারতের নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়ন করে মতুয়া সম্প্রদায়কে পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও গত প্রায় পাঁচ বছরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিজেপি সরকার। অথচ প্রধানত এই মতুয়া সমাজের সমর্থনেই ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভায় ভালো ফল করেছিল বিজেপি। ফলে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ মোদী সরকারের উপর প্রবল অসন্তুষ্ট। দীর্ঘ সময় পরে কিছুদিন আগে কলকাতায় জনসভা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু শহরের ধর্মতলায় তাঁর সেই সভায় মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশ কম। অবস্থা দেখে কিছুটা হতাশ হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংক্ষিপ্ত করেন ভাষণ। সভায় প্রশ্ন তোলেন, “বাংলার আওয়াজ কোথায় হারিয়ে গেল?” অমিত শাহর জনসভা দেখে অবশ্য মনে হয়েছে, ৩৫টি আসন তো দূর, ১৮টি আসন পাওয়াও বিজেপির পক্ষে মুশকিল হবে। এর অন্যতম প্রধান কারণ কিছুটা আঁচ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আসা মূলত নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গোষ্ঠী মতুয়া সমাজের মানুষ শাহর সমাবেশে তেমন একটা আসেননি বলে জনসভায় উপস্থিতি ছিল কম। মতুয়া সমাজের তরফে এখন বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে আর সমর্থন দেওয়া যাবে না বিজেপিকে।
উল্লেখ্য, মতুয়াদের এই ক্ষোভ কাজে লাগাতে কার্যত মাঠে নেমে পড়েছে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। মতুয়াদের সঙ্গে নিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেবে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। বুধবার এক বিবৃতি দিয়ে এই খবর জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী। অতি সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে গিয়ে হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী জানিয়েছেন, ‘‘অন্যায় ভাবে এনআরসি প্রয়োগের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে এই অন্যায়ের চিরতরে প্রতিকার করা হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি মতুয়া-সহ সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ এবং জৈনদের ক্ষেত্রে যাঁরা জন্মসূত্রে ভারতীয়, তাঁরা বিশ্বের যেখানেই থাকুন, ভারতের নাগরিকত্ব নিতে চাইলে যাতে দিনক্ষণ না দেখে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, তার দাবি তোলেন। চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমরা কোনও মূল্যেই মতুয়াদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলকে ভোটের নোংরা রাজনীতি করতে দেব না।’’ তাঁর দাবি করেছেন, তারা লোভসভা ভোটে রাজ্যে নির্ধারক শক্তি হবেন। আর যা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বঙ্গ বিজেপি। তারা কি ভাবে মতুয়াদের মন জয় করবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বৈঠক করতে শুরু করে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত বছর দুর্গাপুজোয় অসুরের জায়গায় গান্ধীকে বসিয়ে সংবাদ শিরোনামে আসে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। দক্ষিণ কলকাতার রুবি পার্কে এই পুজোর আয়োজন করে তারা। পরে অবশ্য অসুরের জায়গায় থেকে গান্ধী মূর্তিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিতর্কের ঝড় উঠেছিল বাংলা জুড়ে।