গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পথে হাঁটল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অবিলম্বেই রাজ্যের কাছ থেকে বড় উপহার পেতে চলেছেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দারা। সেখানে দামোদরের ওপর থাকা কৃষক সেতুর পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। তাই সেই সেতুর বিকল্প সেতু গড়ে তুলতে রাজ্য সরকার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে নতুন একটি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণার আগেই সেই সেতুর শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষক সেতুর পাশেই বিকল্প ব্রিজ তৈরি হবে। প্রাথমিকভাবে তার জন্য জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে। সেতু তৈরিতে যে টাকা খরচ হবে তা রাজ্যের অর্থ দফতরের ছাড়পত্র পেয়ে গেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসার আগেই অর্থ দফতরও ছাড়পত্র দেবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। দক্ষিণ দামোদর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি মেনে ১৯৭৫ সালে তৎকালীন অবিভক্ত বর্ধমান জেলার সদর শহর বর্ধমানের বুকে দামোদরের ওপর কৃষক সেতু গড়ে তোলার জন্য শিলান্যাস সাধন হয়েছিল। ৫০০ মিটারের কিছু বেশি লম্বা এই সেতু ১৯৭৭ সালে উদ্বোধন করে তা চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর দীর্ঘ বাম জমানায় এই সেতুর বিন্দুমাত্র কোনও সংস্কার না হওয়ায় এই সেতু রীতিমত জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। পরিবর্তনের পরে তৃণমূলের জমানায় ২০১৪ সালে এই সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হলেও দেখা যায় তা যানবাহণের অতিরিক্ত চাপ নিতে পারছে না। নিত্যদিন সেখানে যানজট লেগেই থাকছে। ফলে কৃষক সেতু পার হতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে আমজনতাকে। তাছাড়া একসময় যে সেতু দক্ষিণ দামোদর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বর্ধমান শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছিল, পরবর্তীকালে দেখা যায় সেই সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের অনান্য জেলার মানুষজন, যাত্রীবাহী বাস ও পণ্য বোঝাই ভারী যানও চলাচল করছে। আর এটাই সেতুর মেয়াদের ক্ষেত্রে বড়সড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফলত, স্বাভাবিকভাবেই ক্রমশ সেখানে বিকল্প সেতু গড়ার দাবি জোরালো হচ্ছিল। সেই দাবিকেই এবার মান্যতা দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “সেতু তৈরি নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়ে গিয়েছে। ফাইলের কাজ অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এসে সেতু তৈরির কথা ঘোষণা করবেন। সেতু তৈরিতে জমি কোনও সমস্যা হবে না। পলেমপুর এলাকাতেই বিকল্প সেতু তৈরি হবে। শিলান্যাসের পরই দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে। কৃষক সেতু পার হতে নিত্যদিন হয়রানির শিকার হতে হয়। বেশিরভাগ সময় যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে। সমস্যায় পড়েন আমজনতা। বিকল্প সেতু তৈরি হলে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। বিশেষ করে পূর্ব বর্ধমান, হুগলি এবং বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দারাঝ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন।” রায়নার বিধায়ক শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, “সেতু তৈরির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা থেকে জেলার বাসিন্দারা মুক্তি পাবেন। কৃষক সেতুর ওপর চাপ অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই সেতু যখন তৈরি হয় সেইসময় যানবাহন অনেক কম ছিল। এখন তা বেড়ে গিয়েছে। সংকীর্ণ সেতুতে যানজট নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে উঠেছে। হামেশাই দুর্ঘটনাও ঘটছে। বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি সহ বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক এই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করে। বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদরের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন।” প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জেলায় মুখ্যমন্ত্রী আসার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে তিনি লোকসভা নির্বাচনের আগে জেলায় বৈঠক করতে আসছেন বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেই সময়েই এই সেতুর শিলান্যাস করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।