সেই জগদীপ ধনকর বাংলার রাজ্যপাল থাকার সময় থেকেই ঝুলে রয়েছে হাওড়া পুরনিগম এবং বালি পুরসভার নির্বাচন। নবান্নর দাবি, এই নির্বাচন করানোর জন্য যে বিল রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়েছিল তা রাজভবনে পাঠানো হলেও রাজ্যপাল তাতে সাক্ষর করেননি। যদিও প্রায় দেড় বছর ধরে সেই বিল রাজভবনে পড়ে থাকলেও তা স্বীকারই করছিল না রাজভবন। এমনকী রাজ্যপাল বদল হলেও বিল ফেরত আসার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে রাজভবনের তরফে নবান্ন এবং রাজ্য বিধানসভায় পাঠানো এক চিঠিতেই সরাসরি না হলেও কিছুটা ঘুরিয়ে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে সেই বিল আটকে রেখেছেন রাজ্যপালই। আর তা পড়েও আছে রাজভবনেই। এই স্বীকারোক্তিই কার্যত বলে দিল রাজ্য সরকার এতদিন যে দাবি করে আসছিল তা সঠিক।
প্রসঙ্গত, হাওড়া পুরনিগম থেকে বালিকে আলাদা করে ফের তাকে পৃথক পুরসভার রূপ দিতে বিধানসভায় বিল পাশ করেছে মমতা সরকার। নিয়মানুসারে সেই বিলে রাজ্যপাল সাক্ষর করলে তবে তা আইনে পরিণত হবে। আইন হলে তবেই পুরনির্বাচন সম্ভব। কিন্তু রাজ্যপাল বিল আটকে রেখে তাতে সই না করার জন্য হাওড়া পুর নিগমের নির্বাচন সম্ভব হয়নি। হাওড়া শহরে শেষবার পুরনির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেই সময় শহরের ওয়ার্ড সংখ্যা ছিল ৫০। বালি সেই সময় আলাদা পুরসভাই ছিল। ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার বালি পুরসভাকে হাওড়ার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়। সেই সুবাদে বালির তৎকালীন ৩৫টি ওয়ার্ডকে পুনর্গঠিত করে ১৬টি ওয়ার্ডের রূপ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে সেই ১৬টি ওয়ার্ডে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
২০১৮ সালে এই পুরনিগমে ফের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও রাজ্য সরকার সেই নির্বাচন করায়নি। পরিবর্তে বসানো হয়েছিল প্রশাসক। মাঝে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, বালিকে ফের আগেকার মতোই পৃথক পুরসভা হিসাবেই গড়ে তোলা হবে এবং হাওড়া পুরনিগম আগের মতোই ৫০টি ওয়ার্ডের হবে। সেই মর্মেই রাজ্য সরকার বিধানসভায় বিল পাশ করেছিল। কিন্ত সেই বিলই আটকে রেখেছেন রাজ্যপাল। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৯ নভেম্বর রাজভবনের তরফে নবান্ন এবং বিধানসভায় একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। রাজভবনের সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারি ওই চিঠি দিয়েছেন। বিধানসভায় পাশ হওয়া ১২টি বিলে ছাড়পত্র দিতে ফের রাজ্যের কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে তাতে।
নভেম্বরের গোড়ায় ২২টি বকেয়া বিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর বিলগুলির বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজভবন। সেখানে জানানো হয়েছিল, ২২টির মধ্যে ১২টি বিল নিয়ে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। এবারও সেই ১২টি বিল নিয়েই রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে রাজভবন। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি তার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে বিধানসভার সচিবকেও। এসব বিলে রাজ্যপাল সম্মতি দেওয়ার আগে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। আর এই চিঠির অর্থই হল, রাজ্যপালই এতদিন ধরে হাওড়া পুরনিগমের নির্বাচনের বিল আটকে রেখেছিলেন সেটা স্বীকার করে নেওয়া।