চাকরিপ্রার্থীদের জন্য ফের সুখবর আনল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আগামীকাল, অর্থাৎ মঙ্গলবার রাজ্য সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কারিগরি কোর্সে প্রশিক্ষিতদের জন্য জেলা ভিত্তিক জব ফেয়ার । কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় এই মেলা চলবে ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভিন রাজ্যের অনেক নামী সংস্থা আসছে জব ফেয়ারে অংশ নিতে। রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য কারিগরি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিতদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। পলিটেকনিক এবং আইটিআই থেকে বিভিন্ন কারিগরি কোর্সের ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেটধারীদের পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সফল প্রার্থীরাও এই মেলায় চাকরির জন্য বিবেচ্য হবেন। গতবছর জেলাভিত্তিক যেসব জব ফেয়ার হয়েছিল সেখানে কারিগরি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ৮ হাজারের বেশি যুবক-যুবতী চাকরি পেয়েছিলেন। এবারে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এখন আইটিআই, পলিটেকনিকগুলির পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। এখন রাজ্যে সরকারি অর্থ সাহায্যপ্রাপ্ত ভিটিসি’র সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। এখানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ২ বছরের বৃত্তিমূলক কারিগরি কোর্স পড়ানো হয়। এছাড়া অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ তরুণদের জন্যও চালানো হয় নানা ধরনের কারিগরি শর্ট কোর্স। বৃত্তিমূলক শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এখন ৪০ হাজারের বেশি। সাধারণ বিষয়ের পাশাপাশি কারিগরি বিষয় নিয়ে পড়েন বৃত্তিমূলক শাখার উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ারা। চাকরির সুযোগ বেশি বলেই বৃত্তিমূলক শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পড়ার ঝোঁকও বাড়ছে। রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, টাটা মোটরস, এল অ্যান্ড টি-সহ অনেক নামী সংস্থা এবারের জব ফেয়ারে আসছে। ভিন রাজ্যেও অনেক চাকরি হচ্ছে। আইটিআই প্রশিক্ষিতদের শ’দুয়েক চাকরি দেবে দক্ষিণ ভারতের দু’টি বস্ত্রশিল্প সংস্থা।
এপ্রসঙ্গে রাজ্যের সরকারি কর্মী সংগঠনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের ফলেই রাজ্যে কারিগরি প্রশিক্ষিতদের কর্মসংস্থান সম্ভব হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলির পরিকাঠামো উন্নত হলে আরও চাকরি দেওয়া সম্ভব। ভিটিসিগুলি চুক্তিতে নিযুক্ত শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের দিয়ে বাম আমল থেকে চালানো হচ্ছে। এখানে নিয়োগের জন্য বিশেষ কমিশন গঠন করা জরুরি।” একই সঙ্গে জানা গিয়েছে, রাজ্যে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র তথা মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে দক্ষ কারিগর জোগানের জন্য এবার রাজ্য সরকার রাজ্যজুড়ে প্রতিটি শিল্পতালুক এবং ক্লাস্টারে উৎকর্ষ বাংলার প্রশিক্ষণ শিবির চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিল্পতালুকগুলির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এই কেন্দ্রগুলিতে। উল্লেখ্য, সম্প্রতিই অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার। তার মধ্যে বড় অংশের বিনিয়োগ আসছে ক্ষুদ্রশিল্পে। ফলে প্রয়োজন পড়বে বহু দক্ষ কারিগরের। এবার সেই লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। এর জন্য নবান্ন থেকে প্রতিটি জেলাকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠির সঙ্গেই পাঠানো হয়েছে কাজটি সহজে শেষ করার বিবরণ বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর্স। যাকে অনেকেই এসওপি নামে জানেন। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিটি শিল্পতালুক বা ক্লাস্টারে অন্তত দু’টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে হবে। এই কেন্দ্রগুলি পরিচালনার জন্য মহকুমা শাসকদের মাথায় রেখে একটি করে অ্যাকশন কমিটি গড়বেন জেলাশাসকরা। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে শিল্পতালুকে অবস্থিত সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধির কাজও চালাবে রাজ্য সরকার। যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।