এককথায়, হার মানবে সিনেমাও। বর্ধমানে দু’জন গ্রামীণ পুলিশের সাহস, উপস্থিত বুদ্ধি ও তৎপরতায় বমাল সহ দুই দুষ্কৃতী গ্রেফতার হল। দিনে দুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় একেবারে ফিল্মি ভঙ্গিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দুই দুষ্কৃতীকে ধরায় যেমন খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা তেমনই খুশি পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরাও। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের ২বি জাতীয় সড়কের আউশগ্রামের শিববাটি এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম ইব্রাহিম শেখ ও তুফান চৌধুরী। তাদের বাড়ি কাটোয়ার রাজোয়া এলাকায়। মঙ্গলকোটের রঘুনাথপুরে সুরজ শেখ নামে এক যুবকের লটারির টিকিট বিক্রির দোকান আছে। সেখানে কাজ করেন শাহাজাহান শেখ ওরফে লাল্টু। মঙ্গলবার দুপুরে ব্যবসার টাকা নিয়ে শাহাজাহান বাইকে চেপে একটি ব্যাগে করে নগদ ৫ লক্ষ ১০ হাজার ৪৪০ টাকা এবং ৭ লক্ষ ৮ হাজার ৮০৫ টাকার একটি চেক নিয়ে গুসকরার একটি রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাঙ্কে জমা করতে যাচ্ছিলেন। সে সময় শিববাটির কাছে শাহাজাহানের চলন্ত বাইকে লাথি মারে দুষ্কৃতীরা। শাহাজাহান মাটিতে উল্টে পড়লে ওই দুই বাইক আরোহী দুষ্কৃতী হেলমেট দিয়ে শাহাজাহানের মাথায় আঘাত করে। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
প্রসঙ্গত, ঠিক সেই সময় ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরচ্ছিলেন আউশগ্রামের উক্তা অঞ্চলের ভিলেজ পুলিস সুজন পাল। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরেই ছিনতাইকারীদের পিছনে বাইক নিয়ে ধাওয়া করার পাশাপাশি ফোনে ভেদিয়া অঞ্চলের ভিলেজ পুলিস জাকির শেখ ও ভেদিয়া ক্যাম্পের পুলিশকে খবর দেয়। ভিলেজ পুলিস সুজন পাল বাইক নিয়ে দুস্কৃতিদের পিছনে ধাওয়া করায় দুস্কৃতিরা জাতীয় সড়কের বাগবাটি মোড়ে বাধা পেয়ে অন্য রাস্তায় ঢুকতে পারেনি। তারা বাঁচতে আউশগ্রামের বুধরো গ্রামে ঢুকে পড়ে। পুলিশ দ্রুত সেখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের ধরে ফেলে। উদ্ধার করা হয় খোয়া যাওয়া টাকা ও চেক। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের ব্যবহৃত বাইক, মোবাইল ফোন এবং হেলমেটটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভিলেজ পুলিশ সুজন পালের বাড়ি আউশগ্রামের গোবিন্দপুর গ্রামে আর জাকির সেখের বাড়ি ভেদিয়ায়। ধৃত দু’জনকে বুধবার বর্ধমান আদালতে পাঠায় গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ। ধৃতদেরকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজে সন্ধান চালানোর পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রটিকেও উদ্ধার করার চেষ্টা চালাবে পুলিশ। ”দুই ভিলেজ পুলিশ খুব সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের কাজে পুলিস বিভাগ গর্বিত। দুই ভিলেজ পুলিশ সুজন পাল ও জাকির সেখকে কুর্নিশ জানাই”, জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপ।