দীর্ঘ দিন ধরে ক্যানসার-সহ শ্বাসকষ্ট, মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও হৃদযন্ত্রজনিত নানা রকম সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে প্রয়াত হন সাহারা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুব্রত রায়। আর তাঁর প্রয়াণের পর থেকেই ফের শুরু গেছে সেই সেবি-সাহারা অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা ২৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চর্চা। সাহারার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বেআইনি অর্থ লগ্নি প্রকল্পের (পনজি) মাধ্যমে কোটি কোটি লগ্নিকারীর থেকে টাকা তুলেছিল। কিন্তু সে টাকা আর সংস্থার তরফে লগ্নিকারীদের ফেরত দেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট কর্পোরেশন এবং সহারা হাউসিং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন নামে সহারার দুই সংস্থাকে ৩ কোটি লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি। সাহারার দুই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঋণপত্রের মাধ্যমে বেআইনি ভাবে লগ্নিকারীদের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরে সহারার দুই সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইও চলে। যদিও এই লড়াইয়ে আইন ভাঙার অভিযোগ বার বার অস্বীকার করেছিল সহারার দুই সংস্থা।
২০১২ সালের ৩১ অগস্ট সেবির নির্দেশ বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে ১৫ শতাংশ সুদ-সহ মূলধন ফেরাতে হবে লগ্নিকারীদের। সেই উদ্দেশে সেবির কাছে টাকা জমার নির্দেশও দেওয়া হয় সাহারার দুই সংস্থাকে। শীর্ষ আদালত সাহারার দুই সংস্থাকে সেবির কাছে ২৪ হাজার কোটি টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। যদিও সুব্রতের সংস্থা দাবি করেছিল, ৯৫ শতাংশের বেশি লগ্নিকারীর টাকা সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সেবির সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১১ বছরে সাহারার দুই সংস্থা লগ্নিকারীদের মাত্র ১৩৮.০৭ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি।
অন্য দিকে সহারার দুই সংস্থা সেবির অ্যাকাউন্টে যে টাকা রেখেছিল তা সুদে-আসলে মিলিয়ে ২৫,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে সহারার দুই সংস্থা ৭ লক্ষ টাকা লগ্নকারীদের ফেরত দিয়েছে বলে সেবির সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে। সাহারার দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া খুবই ধীর গতিতে চলছে। সেবির রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে ৫৩,৬৮৭টি অ্যাকাউন্টের লগ্নির টাকা ফেরত চেয়ে এখনও পর্যন্ত ১৯,৬৫০টি আর্জি জমা পড়েছে। ১৯,৬৫০টি আর্জির মধ্যে ১৭,৫২৬টি আর্জির প্রেক্ষিতে ৪৮,৩২৬টি অ্যাকাউন্টে মোট ১৩৮.০৭ কোটি টাকা ফেরানো হয়েছে।
সেবির নির্দেশিকা এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুযায়ী সাহারার ১৫,৬৪৬.৬৮ কোটি টাকা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের অগস্ট মাসে সহারার চারটি সংস্থার লগ্নিকারীদের মোট ৫ হাজার কোটি টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্র। টাকা পাওয়ার আবেদনের জন্য সিআরসিএস-সাহারা রিফান্ড পোর্টাল চালু করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এখনও পর্যন্ত ১৮ লক্ষ আমানতকারী সেই পোর্টালে নাম নথিবদ্ধ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। সহারা গোষ্ঠীর কর্ণধারের মৃত্যুর পর আবার নতুন করে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুঁজি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।