ইতিমধ্যেই সারা বাংলায় টেলি-মেডিসিন পরিষেবা শুরু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতেও চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে এহেন পদক্ষেপ নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ব্রেন-স্ট্রোকের রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা ও বহুমূল্য জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রকল্পও শুরু হয়ে গেছে। আর এবার হার্ট অ্যাটাকের রোগীর চিকিৎসাতেও টেলি-মেডিসিন পরিষেবাকে জেলায় জেলায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য। গ্রামীণ বা শহরতলির যেসব সরকারি হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসার যথেষ্ট পরিকাঠামো নেই, সেখানেও সম্ভব হবে জীবনদায়ী চিকিৎসা। এর জন্য এবার এবার হার্ট অ্যাটাকের ‘স্বাস্থ্যইঙ্গিত’ টেলি-মেডিসিন চালু হচ্ছে পিজি হাসপাতালে। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তবাহী ধমনী চালু করতে জীবনদায়ী ওষুধ হল স্টেপটোকাইনাস ইঞ্জেকশন। আচমকা হার্ট ব্লক, ব্লাড ক্লট হয়ে গেলে এই ইঞ্জেকশনের এক ডোজেই ব্লকেজ খুলে যায়। ফলে স্টেন্ট বসানোর জন্য কিছুটা সময় পাওয়া যায়। আচমকা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু ঠেকানো যায়। হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় এই জীবনদায়ী পন্থাকে বলা হয় থ্রম্বোলাইসিস বা ফিব্রিনোলাইটিক থেরাপি। এই থেরাপিই এবার টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহর, শহরতলিতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কানপুর-সহ একাধিক আইআইটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই পরিষেবা চালু হতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি। রাজ্যস্তরে এই পরিষেবার দায়িত্ব নেবে পিজি হাসপাতাল। পিজির পরামর্শ নিয়েই জেলা ও মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলি কাজ করবে।
পাশাপাশি পিজি সূত্রে খবর, এখানকার কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগ টেলিমেডিসিন চালু করবে। হার্ট অ্যাটাকের রোগী এলে তাকে বিশেষ ধরনের একটি চেয়ারে বসানো হবে তাঁকে। সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ড হতে শুরু করবে তাঁর প্রেসার, সুগার, নাড়ির গতি, ইসিজি, হার্টের পাম্পিং সহ নানা তথ্য। সেগুলি অনলাইনে চলে যাবে পিজির চিকিৎসকদের কাছে। তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। এই ধরনের বিশেষ চেয়ার তৈরি করেছেন আইআইটির গবেষকরা। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, হার্ট অ্যাটাকের ৬ ঘণ্টার মধ্যে থ্রম্বোলাইসিস করা জরুরি। সময় নষ্ট মানেই বড় বিপদ। সেই জায়গায় যদি সময়ে স্টেপটোকাইনাস, ইউরোকাইনাস, টিপিএএস-এর মতো জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় তাহলে বিপদ এড়ানো যাবে। মাত্র এক বছরে রাজ্য টেলি-মেডিসিন পরিষেবা দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে। অন্তত ৪০০ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী সঠিক সময়ে অর্থাৎ আক্রান্ত হওয়ার পরের চার ঘণ্টা বা গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যেই চিকিৎসা পেয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস-এর (বিআইএন) ডাক্তারদের সাহায্যে রাজ্যের ৩৮টি বড় ও মাঝারি সরকারি হাসপাতালে চলছে স্ট্রোকে আক্রান্তদের টেলি-মেডিসিন চিকিৎসা মরণাপন্ন রোগী এলেই তাঁর সিটি স্ক্যান রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে বাঙ্গুরে। রোগীর অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বলে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, করোনা মহামারী শুরুর পর অধিকাংশ চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করে দেন এবং হাসপাতালেও চাপ ক্রমাগত বাড়ছিল। সংক্রমণের হারও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। সে সময় টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে ঘরে বসেই বহু রোগী চিকিৎসা পান। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে টেলি-মেডিসিন পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এখন এই প্রকল্পই বহুজনকে ফিরিয়ে আনছে সুস্থ জীবনে।