খুশির হাওয়া শান্তিনিকেতনের জুড়ে। চলতি বছরেই প্রত্যাবর্তন ঘটতে চলেছেহ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য পৌষ মেলার। সব কিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে, অর্থাৎ বাংলার বছরের ৭ই পৌষ থেকেই ফের পৌষ মেলাকে ফিরে পাওয়া যাবে শান্তিনিকেতনের মাটিতে, তার পুরনো আঙ্গিকেই। বিশ্বভারতীর সূত্রে তেমনটাই জানা যাচ্ছে। আর এই ইঙ্গিত মিলতেই বোলপুর জুড়ে এখন খুশির আবহ। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা রীতিমতো উত্তেজিত পৌষ মেলার এই প্রত্যাবর্তন ঘিরে। কারণ এই মেলা বোলপুরের অর্থনীতির অন্যতম ধারক ও বাহক। বীরভূমের অর্থনীতিতেও অক্সিজেন যোগায় এই মেলা। তবে এবারে মেলার আয়োজনের পথে বিশ্বভারতীর কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে পরিবেশ দূষণ রোধ। বার বার এই মেলাকে ঘিরে পরিবেশবিদরা দূষণের অভিযোগ তুলেছেন। তা নিয়ে মামলাও হয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জাতীয় পরিবেশ আদালত পর্যন্ত। শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর অনন্য দুই বৈশিষ্ট্য হল পৌষ মেলা ও বসন্ত উৎসব। নরেন্দ্র মোদীর আমলে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে আসার পর থেকেই এই দুই ঐতিহ্যই বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ একদিকে যেমন পৌষ মেলার আয়োজন বন্ধ করে দেন, তেমনি বসন্ত উৎসবেও শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, প্রাক্তনী ও পর্যটকদের জন্য দরজা বন্ধ করে দেন। কার্যত সেই দুই ঘটনা ধাক্কা দিয়েছিল বিশ্বভারতীর নিজস্ব ঐতিহ্যকে।
আর এবার ‘বিদ্যুৎ-বিদায়’ সম্পন্ন হতেই উৎসবেও শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী থেকে শুরু করে রবীন্দ্রপ্রেমীরা, বোলপুরবাসীরা সরব হন পৌষ মেলা ফিরিয়ে আনার পক্ষে। তাঁরা সরব হন বসন্ত উৎসবের দরজা সকলের জন্য খুলে দিতে। সেই দাবিকে মান্যতা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন সদ্য সদ্য বিশ্বভারতীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয়কুমার মল্লিক। বৃহস্পতিবার তিনি দায়িত্বগ্রহণ করে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, “আমি শান্তিনিকেতনের ছাত্র। শান্তিনিকেতনের আবেগ বুঝি। এর বেশি কিছু বলব না। বাকিটা আপনারা বুঝে নিন।” কার্যত সেই ইঙ্গিতবাহী বার্তা বোলপুরজুড়ে ছড়িয়ে পড়তেই কার্যত উৎসব শুরু হয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমে নয়া ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের বার্তা ছড়িয়ে পড়তেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বোলপুরের নানা হোটেল ও শান্তিনিকেতনের নানা রিসর্টে ফোন আসা শুরু হয় বুকিংয়ের জন্য। আর সেই ঘটনায় রীতিমত খুশি বোলপুরের ব্যবসায়ীরা। বীরভূমের মহকুমা শহর হলেও বোলপুরের প্রাণকেন্দ্র শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী। সেই শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী বিদ্যুৎ জমানায় কার্যত জেলাখানায় পরিণত হয়েছিল। বিদ্যুৎ বিতাড়িত হতেই সেখানে এখন মুক্ত হাওয়ার খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য ইক্ষুণ্ণ রাখতে রাজ্য সরকার সর্বোতভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। একই সঙ্গে জানা গিয়েছে, এবার পৌষ মেলার উদ্বোধনে বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। কার্যত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সবার সঙ্গেই সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখবেন। “কারও সঙ্গে যাতে দূরত্ব না থাকে, সেই চেষ্টা করব। এটি রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠান। এখানে এমন কিছু করা উচিত নয়, যা তাঁর মর্যাদার বিরুদ্ধে যায়”, জানিয়েছেন তিনি।