কোম্পানি আইন, ১৯৫৬-র ধারা ২৫ অনুযায়ী নথিবদ্ধ যে কোনও রাজনৈতিক দল একটি নির্বাচনী ট্রাস্ট গঠন করতে পারে। সেই মতই ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে চালু হয়েছিল নির্বাচনী ট্রাস্ট প্রকল্প। তবে মোদী জমানায় ২০১৮ সালে ইলেক্টোরাল (নির্বাচনী) বন্ড (ইবি) চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। যা এই মুহূর্তে বিতর্কের শিরোনামে। জল গড়িয়েছে শীর্ষ আদালতে। তবে তিন দিনের শুনানির পর, সুপ্রিম কোর্ট ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আবেদনের মামলায় রায়দান স্থগিত রেখেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বিতর্কিত ইলেক্টোরাল (নির্বাচনী) বন্ড (ইবি) চালু হওয়ার আগে, একটি ইলেক্টোরাল (নির্বাচনী) ট্রাস্ট (ইটি) প্রকল্প ছিল। যা, ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকার চালু করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোকে যাতে কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তিবিশেষ অনুদান দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থার জন্য এই প্রকল্পগুলো চালু করা হয়েছে। তার মধ্যে নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পে দাতাদের নাম গোপন থাকে। নির্বাচনী ট্রাস্ট প্রকল্পে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যক্তি এবং কোম্পানির অবদান এবং প্রতি বছর দলগুলোকে সেই ব্যক্তি বা কোম্পানি কত অনুদান দিচ্ছে, তা জানাতে হয়। বর্তমানে দুটি প্রকল্পই চালু আছে।
২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের ঘোষিত প্রকল্প অনুযায়ী কোম্পানি আইন, ১৯৫৬-র ধারা ২৫ অনুযায়ী নথিবদ্ধ যে কোনও রাজনৈতিক দল একটি নির্বাচনী ট্রাস্ট গঠন করতে পারে। আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ধারা ১৭সিএ-এর অধীনে, ভারতের যে কোনও নাগরিক, ভারতে নথিবদ্ধ সংস্থা বা ফার্ম অথবা হিন্দু অবিভক্ত পরিবার কিংবা ভারতের সমিতি যে কোনও একটি নির্বাচনী ট্রাস্টে দান করতে পারে। নির্বাচনী ট্রাস্টগুলোকে প্রতি তিন আর্থিক বছরে পুনর্নবীকরণের আবেদন করতে হয়।
জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১-এর অধীনে নথিবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলিকে কোনও আর্থিক বছরে প্রাপ্ত অর্থের ৯৫ শতাংশ দান করতে হয়। দাতাদের প্যান (একজন বাসিন্দার ক্ষেত্রে) এবং পাসপোর্ট নম্বর (একজন এনআরআই-এর ক্ষেত্রে) এজন্য দরকার। নথিবদ্ধ নির্বাচনী ট্রাস্টের সংখ্যা ২০১৩-য় ছিল তিনটি। ২০২১-২২ সালে বেড়ে হয়েছে ১৭। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটিই প্রতিবছর দান করে। অনুদান দাতা এবং গ্রহীতাদের জন্য নির্বাচনী ট্রাস্টের পথ অনেক স্বচ্ছ। সেখানে পরিষ্কার জানা যায়, কে কাকে অনুদান দিচ্ছে।
কিন্তু, মোদী সরকারের নির্বাচনী বন্ডে এসব জানা যাবে না। যেমন, প্রুডেন্ট নির্বাচনী ট্রাস্ট, যা ২০১৭ সালের আগে সত্য ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট নামে পরিচিত ছিল, ডিএলএফ, জিএমআর এবং ভারতী এয়ারটেলের মতো বিভিন্ন কোম্পানি এবং বেশ কিছু ব্যক্তির থেকে অনুদান পেয়েছে এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দলকে সেই অর্থ দান করেছে। কিন্তু, নির্বাচনী বন্ড অনুযায়ী কোন দলগুলি এই অর্থ পেয়েছে, চিহ্নিত করা কঠিন। তবে দলগুলি প্রাপ্ত মোট অনুদানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে জানায়। কিন্তু, দাতাদের কোনও বিবরণ দেয় না।