প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হুগলির প্রত্যন্ত গ্রাম সিঙ্গুরে তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ঘোষণা করে বলেছিলেন, সিঙ্গুরে টাটারা ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা করবে। শিল্পায়নের হাত ধরে প্রচুর কর্মসংস্থান আসবে। কিন্তু ফসল ফলানোই যাঁদের মূল জীবিকা, কারখানা, চাকরিতে মন গলল না সেই কৃষকদের একটা বড় অংশের। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ঝড় ওঠে। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোরদার আন্দোলনের মুখে পড়তে হয় সিপিএমকে। যার সৌজন্যে ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে সিপিএমের হার ও ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের পতন।
তবে এই সিঙ্গুর নিয়ে কোনওদিনই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পাশে দাঁড়াননি সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় অংশ। পলিটব্যুরো এর দায় রাজ্য নেতৃত্বের দিকেই ঠেলে দিয়েছিল। একে গোপালন ভবন বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিল, সিঙ্গুরে শিল্পের সিদ্ধান্ত রাজনীতির পরিসরে কত বড় ভুল ছিল। সিপিএম পলিটব্যুরোর তরফে পরে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছিল, বাম সরকার সিঙ্গুরে টাটা কারখানার প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে কর্মসংস্থান তৈরি করতে চেয়েছিল। ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন মেনে জমি নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ ছিল না। এই আইনে কৃষকদের স্বার্থ পুরোপুরি সুরক্ষিত ছিল না।
জমি অধিগ্রহণ ইস্যুতে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরই পর্যালোচনায় স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল ‘প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ভুলের খেসারত গুনতে হয়েছে।’ অন্যদিকে, রাজ্য সিপিএমের একাংশও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর দিকেই আঙুল তুলেছিল। আলিমুদ্দিনের যুক্তি ছিল, ভূমিহীনদের জমি তুলে দিয়ে এক সময় মাটি শক্ত করেছিল যে সিপিএম, তারা জোর করে জমি নিচ্ছে দেখে অনেকেই তা মানতে পারেনি। মনে মনে ক্ষোভ জন্মেছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দিয়েছিল, জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতি ঠিক ছিল না।