মোদী-জমানায় ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির জেরে জর্জরিত দেশবাসী। প্রতিবছর প্রিমিয়াম জমা দিতেই কার্যত মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় মধ্যবিত্তদের। বেসরকারি চিকিৎসায় বিপুল খরচের কথা ভেবে অনেকে পরিবারের সবার নামে স্বাস্থ্যবিমা করে রাখেন। আশায় থাকেন, প্রয়োজনের সময় সেটিই তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু সেখানেও ঘনিয়ে এসেছে ঘোর দুশ্চিন্তা। পরিসংখ্যান বলছে, স্বাস্থ্যবিমায় চিকিৎসার খরচ পেতে রীতিমতো হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকদের একটা বড় অংশ। অভিযোগের পাহাড় জমছে ইনসিওরেন্স অম্বুডসম্যান বা বিমা লোকপালে। বছর বছর লাফিয়ে বাড়ছে সেই অভিযোগ। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাও। বিমা করানোর পর কোনও গ্রাহক সুষ্ঠু পরিষেবা না পেলে বিমা লোকপালে অভিযোগ করতে পারেন। পলিসির শর্ত অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের টাকা না মিললে বা কম টাকা পাওয়া গেলেও লোকপালের দ্বারস্থ হওয়া যায়। স্বাস্থ্যবিমার পাশাপাশি জীবনবিমা বা সাধারণ বিমার গ্রাহকরাও একইভাবে অভিযোগ জানাতে পারেন এখানে। সেই বিমা লোকপালের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দেশে মোট ১২,৭২১টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে অভিযোগের সংখ্যা এক লাফে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৯১৬-য়।
পাশাপাশি, গত অর্থবর্ষে, অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ হাজার ১৫৩। এই তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যথাক্রমে ১ হাজার ১৬১, ১ হাজার ১২৭ এবং ১ হাজার ২৭২টি অভিযোগ জমা পড়েছে অম্বুডসম্যানে। অভিযোগ জানালে সব সময় যে অভিযোগকারীর পক্ষেই সিদ্ধান্ত হয়, তা নয়। বহু অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেয় লোকপাল। যেমন, গত অর্থবর্ষে সারা দেশে ২৯ হাজার ১৫৩টি অভিযোগের মধ্যে ১২ হাজার ৩৪৮টিই ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দিয়েছিল বিমা লোকপাল। মাত্র ৫ হাজার ৯৭২টি ক্ষেত্রে অভিযোগকারী পক্ষে গিয়েছিল রায়। বাদবাকি ক্ষেত্রে হয় অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়েছে, অথবা রায় গিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার পক্ষে। তবে বিমা লোকপালের দাবি, তাদের কাছে জমা পড়া অভিযোগগুলির সিংহভাগের নিষ্পত্তি হয়ে যায় এক মাসের মধ্যে। সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে গ্রাহকের সুরাহা পেতে বছর গড়িয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, চিকিৎসার খরচ যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে স্বাস্থ্যবিমা করিয়ে রাখার ঝোঁকও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় চিকিৎসার টাকা না পাওয়া গেলে এত কষ্ট করে প্রিমিয়াম দেওয়ার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। তাই বিমা লোকপালে প্রচুর অভিযোগের তথ্য প্রকাশ্যে আসায় স্বাভাবিক দেশজুড়ে মাথাব্যথা বাড়ছে গ্রাহকদের।