একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল পিছু ছাড়ছে না বঙ্গ বিজেপির। একের পর এক ভোটে ভরাডুবি, নেতা-বিধায়ক-মন্ত্রীদের দলত্যাগ, সাংগঠনিক দুর্বলতা, আদি-নব্য দ্বন্দ্ব ক্রমশ কোণঠাসা করেছে পদ্মশিবিরকে। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগেই ফের দুশ্চিন্তা বঙ্গ বিজেপিতে। এবার সংসদের নিম্নকক্ষে বাংলা থেকে বিজেপির কতজন সাংসদ প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন, তা নিয়ে রীতিমতো সন্দিহান খোদ দলীয় নেতৃত্বও।জেলা থেকে মণ্ডলস্তর, সর্বত্র ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলছে। অন্যদিকে, ক্রমেই ছোট হচ্ছে পরিষদীয় দল। ২০২১ সালে বাংলা দখলের লক্ষ্যে ২০০ বিধানসভা আসন জয়ে ঝাঁপিয়েছিল পদ্ম পার্টি। যদিও তা ৭৭’এ এসে ঠেকেছিল। দুই জয়ী এমপি নিশীথ প্রামানিক ও জগন্নাথ সরকার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। বিজেপি শক্তি কমে হয় ৭৫। ইতিমধ্যেই সাতজন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে, ধূপগুড়ির বিজেপি বিধায়কের মৃত্যুতে খালি হওয়া আসনও গিয়েছে তৃণমূলের দখলে।
অর্থাৎ, বর্তমানে বাংলায় আইনসভায় বিজেপির ৬৭ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। তবে লোকসভা ভোটের আগে বিধানসভার পরিষদীয় দল অটুট থাকবেই, সেই গ্যারান্টি দিতে পারছেন না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ভাঙনের আশঙ্কায় ভুগছে বঙ্গ বিজেপি। দলের একটা বড় অংশ যেটাকে বিরোধী দলনেতার ব্যর্থতা হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।
এ প্রসঙ্গে পার্টির এক শীর্ষ পদাধিকারী বলেন, দলের বিধায়কদের আগলে রাখার দায়িত্ব পরিষদীয় দলনেতার। এমএলএ-দের একটা বড় অংশের সঙ্গে ওঁর দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। কেননা, বিরোধী দলনেতা মুষ্টিমেয় কিছু বিধায়ককে নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করেছেন। সংশ্লিষ্ট ওই ঘনিষ্ঠ বলয় ছাড়া বাকিদের সঙ্গে ওঁর সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আর সেই সুযোগে তৃণমূলের তরফে পদ্মপার্টির অবহেলিত বিধায়কদের বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে। উক্ত প্রবীণ বিজেপি নেতা আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। পদাধিকার বলে পরিষদীয় দলের সদস্যদের বিক্ষোভ তাঁর শোনা উচিত। কিন্তু বিরোধী দলনেতার প্রভাব-প্রতিপত্তির ধারে কাছেও নেই রাজ্য সভাপতি। তাই স্রেফ দর্শক হয়ে পরিষদীয় দলের ভাঙন দেখতে হচ্ছে তাঁকে। বিধায়ক ভাঙন রুখতে বিরোধী দলনেতা ভূমিকা, এবার সরাসরি বঙ্গ বিজেপির অন্দরে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। লোকসভা ভোটের প্রাকলগ্নে এহেন দৃশ্য যে অশনি সঙ্কেতের মতো, তা বলাই বাহুল্য।