সামনেই লোকসভা নির্বাচন দেশে। আর তার আগে জোরকদমে চলছে রামমন্দিরের কাজ। পাল্লা দিয়ে উড়ছে কোটি কোটি টাকা। উন্নয়নের নামে। ধর্মের নামে। যাতে চাপা পড়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা। হ্যাঁ, এটাই এই মুহূর্তের অযোধ্যা।
অযোধ্যায় এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিন-রাত খাটছেন বারোশো শ্রমিক। হাতে সময় বেশি নেই। ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন। প্রশাসন মনে করছে, সেই সময় অযোধ্যায় থাকবেন ৪০ লক্ষ ভক্ত। তারপরও দৈনিক ১২ লক্ষ মানুষ দর্শনের জন্য আসবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়াকে একটা সিস্টেমে আনাই এখন চ্যালেঞ্জ। এই উপলক্ষ্যে মোট ৫২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
খরচ হয়ে গিয়েছে অর্ধেকেরও বেশি। কিন্তু কাজ পড়ে আছে অনেকটাই। আর তাই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সাজছে অযোধ্যা। লক্ষ্য একটাই, ভোটের সময় ভক্তিরসের সেই হাওয়া যেন চরমে থাকে। তার জন্য যদি কয়েকশো মানুষের জমি কেড়ে নেওয়া হয়? তাতে প্রশাসনের কিছুই আসে যায় না। যৎসামান্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে চোখের জলে ভিটেমাটি ছাড়ছেন তাঁরা। রাস্তা বড় করার লক্ষ্যে জমির সীমানাও ছাঁটা হয়েছে প্রচুর বাড়ির। কারও গিয়েছে ফুটখানেক, কারও আবার তার দ্বিগুণ। অযোধ্যা তো বটেই, লাগোয়া ফৈজাবাদেও চরম যানজট। গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মোড়ে মোড়ে। তার উপর খানা খন্দে ভর্তি রাস্তা। ফলে সামান্য দূরত্ব পেরতেও লাগছে বাড়তি সময়। শহরের মধ্যে দিয়ে অন্তত ছয় জায়গায় রয়েছে রেল লাইন। সেখানেও থমকে যাচ্ছে গতি।
যোগী সরকারের অবশ্য তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। সবাইকে দেওয়া হচ্ছে, রামলালার জন্য ত্যাগ স্বীকারের পরামর্শ। মোদী সরকারের নজর অবশ্য আরও উঁচুতে। আগামী রামমন্দির তাস খেলে আরও ৫ বছরের জন্য ক্ষমতা দখল করতে চায় তারা। এলাকায় জোর জল্পনা, লোকসভা ভোট নাকি ফেব্রুয়ারি-মার্চে এগিয়ে আনা হবে। মে মাস পর্যন্ত এই উন্মাদনা যদি ধরে না রাখা যায়! আসলে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, প্রশাসনের যাবতীয় ব্যর্থতা ভুলিয়ে দেওয়ার ‘জাদুমন্ত্র’ এই রামমন্দির। স্থানীয়রা কেউ কেউ তো বলেই ফেলছেন, ‘সরকার কি আর শুধু মন্দির করছে। আসলে আমাদের বলির পাঁঠাই করা হচ্ছে। বছর পাঁচেক আগে মোদী সরকারের রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছিল পুলওয়ামা। তারই ফলে বালাকোটে হামলা। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের হাওয়ায় চেপে ক্ষমতায় ফেরা বিজেপির। আর এবার অযোধ্যা। ভোট পেতে রামের চেয়ে মোক্ষম ব্রহ্মাস্ত্র আর হয় নাকি!’