ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলার প্রতি দুয়োরানিসুলভ আচরণ অব্যাহত রেখেছে মোদী সরকার। বারবার উঠেছে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে রয়েছে। এরই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বাংলায় পর্যাপ্ত সার না পাঠানোর অভিযোগ উঠল। নভেম্বর-ডিসেম্বরে আলু চাষের জন্য প্রয়োজনীয় এনপিকে সার কেন্দ্র পর্যাপ্ত পরিমাণে পাঠায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নবান্নের অভিযোগ, যে পরিমাণ সার পাঠানোর কথা তার তিনভাগের মাত্র এক ভাগ পাঠানো হয়েছে। ফলে বাকি সার না পাঠানো হলে রাজ্যের আলু চাষীরা সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা নবান্নের। রাজ্যের কৃষি দফতরের অভিযোগ, অনুমোদন থাকা সার পাঠানো হচ্ছে না। এ নিয়ে চিন্তিত কৃষি দফতর। একইসঙ্গে সারের কালোবাজারি হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। কৃষি দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, মাস খানেক আগে দিল্লিতে রাজ্যের কৃষি দফতরের আধিকারিকরা কেন্দ্রের অধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে তাঁরা এ রাজ্যের আলুচাষিদের সার নিয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন। এরপর রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পুজোর আগে ফের সারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু, পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কেন্দ্রের তরফে এখনও সার পাঠানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রসঙ্গত, কৃষি দফতর সূত্র অনুযায়ী বর্তমানে রাজ্যে এনপিকে সার মজুত রয়েছে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু, এই সারে রাজ্যের আলু চাষিদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। কারণ মজুত থাকা সার হল চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ মাত্র। এ বিষয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। এবার সার না পাঠিয়ে রাজ্যের কৃষকদের ভাতে মারার পরিকল্পনা করছে মোদীর সরকার। তবে এটা হতে দেওয়া যাবে না বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী। তিনি জানান, এর জন্য রাজ্য সরকার সবকিছু করবে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আলু চাষ শুরু হয়েছে। মূলত আলু চাষের জন্য এনপিকে সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার ভর্তুকি কাঠামোতে বদল আনার ফলে চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন রাজ্যের কৃষি দফতরের আধিকারিকরা। প্রসঙ্গত, আর কিছুদিনের মধ্যে এই সারের চাহিদা দেশ জুড়ে বাড়বে। তবে কেন্দ্র সার না পাঠানোয় সে ক্ষেত্রে সার উৎপাদক সংস্থাগুলি এই সারের উৎপাদনও কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, কেন্দ্র সরকার বর্তমানে ন্যানো ইউরিয়া সার ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু, সমস্ত জায়গাতে এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় কৃষকরা সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া চাষের খরচ বাড়বে। এই অবস্থায় প্রবল ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন আলুচাষীরা।