ক্ষমতায় আসার বারবার দেশের অর্থনীতি নিয়ে গালভরা প্রচার করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি বড়াই করে বলেছিলেন, তাঁর আমলেই নাকি ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য ফিরেছে। অথচ বাস্তব চিত্র পুরো বিপরীত! রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বিক্রির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মোদী সরকার। শুধু তাই নয়, ব্যাঙ্কের টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে তা ইচ্ছাকৃতভাবে শোধ না করে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বড় বড় শিল্পপতিরা। একটি রিপোর্টে প্রকাশ্যে এসেছে
এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই রিপোর্টের দাবি, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপের পরিমাণ বেড়েছে ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে পরিশোধ না করা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকা করে! পাশাপাশি, রিপোর্ট অনুযায়ী সামগ্রিক অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির শীর্ষ তালিকায় নাম রয়েছে মেহুল চোকসির গীতাঞ্জলি জেমস, ইরা ইনফ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, আরইআই অ্যাগ্রো লিমিটেড, এবিজি শিপইয়ার্ড লিমিটেড ও কনকাস্ট স্টিল অ্যান্ড পাওয়ারের মতো সংস্থাগুলির। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলতে বোঝায়, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যাঁরা বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেন না। এই তালিকায় পড়েন না কৃষক বা গবির মানুষের মতো ছোটখাট ঋণগ্রহিতারা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২২শে জুলাই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অভিযোগ ছিল, দুর্নীতি করে নাকি দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে পূর্বতন ইউপিএ সরকার। আর্থিক ব্যবস্থার স্বাস্থ্য নাকি ফিরেছে তাঁর সরকারের আমলেই। যদিও পরিসংখ্যান উল্টো কথা বলছে। দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকা করে বাড়ছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপের বোঝা। যদিও তার রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে ট্রান্সইউনিয়ন সিবিল-এর তথ্যের ভিত্তিতে। এই পরিসংখ্যান সর্বশেষ সম্ভাব্য তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। তবে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক জুন মাসের সংখ্যা আপটেড করেনি। তাই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপের এই পরিমাণ বাস্তবে সম্ভবত আরও অনেকটাই বেশি। রিপোর্টে দাবি, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপের অর্থ বৃদ্ধির এই পরিমাণ বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে অনেক বেশি সরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে। অর্থাৎ সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে সরকারি ব্যাঙ্কগুলিই। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপের মোট অর্থের ৭৭.৫ শতাংশই সরকারি ব্যাঙ্কগুলি থেকে নেওয়া। শুধুমাত্র স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে তুঙ্গে বিতর্কের ঝড়। নিন্দায় সরব হয়েছে একাধিক মহল।