সাম্প্রতিক কালে বারবারই বঙ্গভঙ্গের দাবি তুলে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কদের প্রকাশ্যেই পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিতে সরব হতে দেখা যাচ্ছে। বিগত কয়েক দশক যাবৎ এই দাবির কেন্দ্র বিন্দুতে আছে কোচবিহার জেলা। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যে সব তথ্য তুলে ধরে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব, এবার তার বিরুদ্ধে পাল্টা নথিপত্র সহকারে কলম ধরেছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়। রাজ্যসভায় তৃণমূলের উপনেতা সুখেন্দু দলের মুখপাত্র ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদক। সেই পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় সুখেন্দু তাঁর লেখা নিবন্ধে দেখিয়েছেন কামতাপুর আন্দোলনকারীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোচবিহারের মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। তিনি আক্রমণ করেছেন কোচবিহারের মানুষ বিজেপির সাংসদ অনন্ত মহারাজকেও।
তৃণমূল সাংসদের কথায়, অনন্ত গত ২১ অগস্ট রাজ্যসভায় শপথ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ১৯৪৭ এর ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্টের ৭ (বি) ধারা অনুযায়ী কোচবিহার মহারাজের কাছ থেকে দখল করা জমি ইংরেজরা ফিরিয়ে দেয়। তখন থেকেই কোচবিহার গ্রেটার কোচবিহার রয়েছে। সুখেন্দুর বক্তব্য, অনন্ত সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্ট ধারায় এমন কোনও কিছুর উল্লেখ নেই। বলা আছে, ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্টের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের অধীনস্থ ভূখণ্ড ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তার কোনও দায়দায়িত্ব যুক্তরাজ্যের সরকারের আর রইল না। এই আইন পাশ হওয়ার পরে বিভিন্ন চুক্তি, সনদ বা সমঝোতা অনুযায়ী বিভিন্ন ভারতীয় প্রশাসক বা দেশিয় শাসকদের ওপর সরকারের সব ক্ষমতা, আধিপত্য, কর্তৃত্ব শেষ হয়ে যাবে। কোথাও কোচবিহার সম্পর্কে সেখানে আলাদা কিছু বলা নেই।
সুখেন্দু লিখেছেন, সেই সময় ৫৮৪টি দেশিয় রাজ্য ছিল। তার মধ্যে ৫৬২টি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিভিন্ন দেশিয় রাজ্যের অধিপতিদের সঙ্গে ভারত সরকারের চুক্তি সম্পাদিত হয়। কোচবিহারও তার ব্যতিক্রম নয়। তিনি একাধিক নথিপত্রের উল্লেখ করে বলেছেন, উত্তরবঙ্গ, গ্রেটার কোচবিহার ইত্যাদি রাজ্য গঠনের দাবির পিছনে আছে চূড়ান্ত ইতিহাস বিকৃতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নের ফারাক কমিয়ে এনেছেন। উত্তরপ্রান্তের আর্থিক পরিস্থিতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তখন বিচ্ছিন্নতাবাদের জিগির তোলা হয়েছে। তাঁর দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ২০টি রাজ্য গঠনের প্রস্তাব বিবেচনাধীন আছে। অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, অন্য রাজ্যগুলিতে রাজ্য গঠনের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। তাহলে পশ্চিমবঙ্গকে কেন বিভাজন রাজনীতির শিকার হতে হবে?