এর আগে বারবার পুলওয়ামা-প্রসঙ্গে সরব হয়ে মোদী সরকার তথা বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। ফের তার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন তিনি। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি। সেই সময় তিনিই ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল। ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর সেই ঘটনায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকে আঙুল তুলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন সত্যপাল মালিক। দাবি করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী লোকসভা নির্বাচনের আগে জওয়ানদের মৃত্যুর এই মর্মান্তিক ঘটনাকে রাজনৈতিক কাজে লাগিয়েছিলেন। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এই ঘটনার তদন্ত চেয়েছিলেন তিনি। পুলওয়ামা হামলার পর ৪ বছর কেটে গেছে। আরও এক লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান সহ একাধিক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনও রয়েছে। তার আগেই সত্যপাল মালিকের সাক্ষাৎকার নিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। প্রশ্ন করলেন পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে, কথা বললেন আদানি ইস্যুতেও। বুধবার রাহুল নিজেই সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা গেছে, পুলওয়ামা হামলা নিয়ে রাহুলের প্রশ্নের জবাবে ঠিক আগের মতোই সরকারকে দুষছেন মালিক। বলেছেন, “আমি দুটো চ্যানেলকে বলেছিলাম যে এটা (পুলওয়ামা) আমাদেরই ভুল ছিল। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল আমি যেন সে কথা কোথাও না বলি। আমার মনে হয়েছিল আমার বিবৃতিতে হয়তো তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু তদন্তই তো হল না! এটা একেবারেই ভোটের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। তৃতীয় দিনেই প্রধানমন্ত্রী মোদী ভাষণ দিলেন, যেখানে তিনি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করলেন।”
পাশাপাশি, সত্যপালের প্রশ্ন, “পুলওয়ামার ঘটনা ঘটেছিল কেন? ওরা পাঁচটা বিমান চেয়েছিল। আমার কাছে যদি চাইত, আমি সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিতাম। বরফের মধ্যে আটকে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের আমি বিমান পাঠিয়েছিলাম। দিল্লিতে বিমান ভাড়া নেওয়া খুবই সহজ। কিন্তু ওদের আবেদনপত্র চার মাস ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পড়ে ছিল। তারপর সেই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হল। বাধ্য হয়ে সিআরপিএফ জওয়ানরা এমন রাস্তা দিয়ে গেলেন, যেটা সবাই অত্যন্ত বিপদসংকুল বলে জানে।” এই অভিযোগ যদিও নতুন নয়। পুলওয়ামা হামলার দায় আগেও কেন্দ্রের মোদী সরকারের উপর চাপিয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি। রাহুল সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি পোস্ট করে লিখেছেন, “এই কথোপকথন কি ইডি-সিবিআইকে নাড়িয়ে দিতে পারবে?” বিস্ফোরক ভর্তি যে ট্রাকটা ওই সিআরসিএফ জওয়ানদের গাড়িতে ধাক্কা মেরেছিল, ওটা গত ১০-১২ দিন ধরে ওই এলাকাতেই ঘুরছিল। পাকিস্তান থেকে ওই বিস্ফোরক পাঠানো হয়েছিল। ট্রাকের চালক এবং মালিক দুজনেরই জঙ্গি কার্যকলাপের ইতিহাস রয়েছে। ওদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু বারবার ছেড়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাও নাকি ওরা ইন্টেলিজেন্স-এর র্যাডারে ধরা পড়েনি, এমনই দাবি করেছেন সত্যপাল। রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আদানি ইস্যুতেও খুল্লামখুল্লা কথা বলেছেন সত্যপাল। তিনি সাফ জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চালু করতে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ আদানি বিশাল বিশাল গোডাউন তৈরি করেছে, নির্দিষ্ট দামে শস্য কিনে নিয়েছে। বলেছেন, “নূন্যতম সহায়ক মূল্য যদি চালু করা হয় তাহলে তো কৃষকরা আরও কম দামে তাদের জিনিস ওদের কাছে বেচবে না!” এছাড়া মণিপুর-ইস্যুতেও বিজেপিকে কড়া ভাষায় একহাত নিয়েছেন তিনি।