শনিবার দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র উৎসব সংখ্যার উদ্বোধন। দুর্গাপুজোর ঢাকে পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এমন আবহে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে, প্ররোচনা এবং উত্তেজনা থেকে সর্বস্তরের মানুষকে দূরে থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের কর্মসূচিতে কালীঘাটের বাসভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির হয়েছিলেন মমতা। তিনিই উৎসব সংখ্যার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রমুখ। সেখানে নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের সবাইকে শুভ শারদীয়া জানাই। এই সময় কোনও বিদ্বেষ নয়, আমরা সবাই এক। ধর্ম সব আপনার আপনার, উৎসব কিন্তু সবার। এই কথাটি মাথায় রেখে, সবাইকে নিয়ে চলুন আমরা এগিয়ে যাই।” তিনি আরও বলেন, “আমি যখন বিশ্ববাংলা লোগোটি এঁকেছিলাম তখন বুঝতে পারিনি এ ভাবে এটা বিশ্বের মঞ্চে সমাদৃত হবে। আমাদের দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। ট্যুরিজমের ডেস্টিনেশনে আজ বাংলা সিলেক্ট হয়েছে। কন্যাশ্রী ইউনাইটেড নেশনের পুরস্কার পেয়েছে, সবুজ সাথীও ইউনেস্কোর পুরস্কার পেয়েছে, সুতরাং কয়েকটা লোক কি বলল, না বলল, তাতে কিছু এসে যায় না। তাদের কথা শুনবেন, কিন্তু ইগনোর করবেন। ইগনোর করাটাই বেটার। আজকের দিনে তাই আমি সবাইকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করব পুজোর ক’দিন বিদ্বেষ না ছড়িয়ে মায়ের কাছে শুভর জন্য প্রার্থনা করার। আর কোনও দিকে প্ররোচনায় পা দেবেন না, কোনও উত্তেজনায় পা দেবেন না। পাড়া প্রতিবেশী সকলে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে চলবেন, যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে পুজো সব জায়গায় সম্পন্ন হয়।” প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে পুজোর উদ্বোধন করেন মমতা। কিন্তু এ বার অসুস্থতার কারণে মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে উদ্বোধন সম্ভব হয়নি। দলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যার উদ্বোধনেও সশরীরে হাজির থাকতে পারেননি তিনি।
এদিন মমতা বলেন, “আজকের দিন শুভ মহালয়া। আমি ফিজিক্যালি যেতাম। আমার ইনফেকশনটা অনেকটাই কন্ট্রোলে চলে এসেছে। এমন ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল যে, আপনারা কোনও দিন ভাবতেও পারবেন না, আফটার ওটি। সেখান থেকে সব কিছু নরমালাইজ করার জন্য চেষ্টা হচ্ছে। এই ১৫টি দিন আমাকে কী ভাবে সংঘর্ষ করতে হয়েছে, জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।” তিনি আরও বলেন, “আশা করি আর কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যথাটা কমে যাবে। এখনও ব্যথা আছে। এটা হেলিকপ্টার থেকে পড়ে গিয়ে আমার লেগেছিল। দ্বিতীয় চোট বার্সেলোনায় লাগে। কিন্তু সেই অবস্থায় আমি ফিরে না এসে, আমি ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ের সব অনুষ্ঠান শেষ করে এসে হাসপাতালে ছুটে যাই। তার পরেই প্রচন্ড ইনফেকশন হয়। আমাকে আইভি করে স্যালাইনের মত চ্যানেল করে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। আমি মানসিক ভাবে সুস্থ। পায়ে একটু সমস্যা আছে, তাও দ্রুত শেষ সেরে যাবে কয়েক দিনের মধ্যে।” এ বার পুজোয় দলের নতুন প্রজন্মের জন্য বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। “আমার প্রায় ১৩৫ টি বই আছে। আমাদের যারা নতুন প্রজন্ম, তারা অনেকেই পুরনো দিনের আন্দোলনের কথা জানেন না। সেগুলো জানবার জন্য এই বইগুলো কিনুন। কিনে বইগুলি পড়ুন। তৃণমূল কেন তৈরি হয়েছিল, উপলব্ধি কি? মানবিক কি? জনতার দরবার কি? আর কবিতা বিতানে এক হাজার কবিতা আছে। সেগুলি ইংরেজিতেও রয়েছে।” সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, “বিশ্বকে জানতে গেলে ভারতবর্ষকে জানতে গেলে আন্দোলনকে জানতে গেলে সংগ্রামকে জানতে গেলে এই বইগুলি পড়তে হবে, আমার একটি বই আছে আলোকবর্তিকা। ছোট্ট ছোট্ট কথার মাধ্যমে, যখনই জীবনে কোনও সঙ্কট আসবে, সেটা যদি আপনারা পড়ে দেখেন আপনারা তার থেকেই সঙ্কট সুরাহা করতে পারবেন। আমাদের ছোট্ট ছোট্ট ভাই বোনেরা যাঁরা এই মুহূর্তে স্টুডেন্ট, ইয়ং জেনারেশন। যারা ২০০১ সালের পর জন্মগ্রহণ করেছেন, বা যারা ২০১০ সালের পর জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের আমি অনুরোধ করব এই বইগুলি পড়ার”, জানিয়েছেন মমতা।