আন্তর্জাতিক রাজনীতির আঙিনায় তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে চলেছে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের সংঘর্ষ। নতুন করে আকাশে ঘনিয়ে উঠেছে যুদ্ধের মেঘ। টালমাটাল পরিস্থিতি। আর তার আঁচ থেকে রেহাই নেই ভারতেরও। ইজরায়েল আর প্যালেস্তাইনের মধ্যে সংঘর্ষের আগুনে পুড়তে পারে ভারতও, এই আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লী। কেন্দ্রের আশঙ্কা, এই যুদ্ধের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে বাজারদর বেড়ে গিয়ে নতুন করে সংকটের সম্মুখীন হতে পারেন দেশবাসী। বিশ্বায়নের যুগে অধিকাংশ দেশের মধ্যেই আমদানি-রফতানি চলতে থাকে। যুদ্ধের জেরে সেই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভাটা পড়ারই কথা। প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান কমে গেলে যেমন তার দাম বাড়বে ভারতের বাজারে, তেমনই আবার রফতানি করা জিনিস এখন পাঠানো না গেলেও মার খাবে দেশের অর্থনীতি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এই যুদ্ধের দরুন বেশ কিছু অর্থনৈতিক সমস্যার কবলে পড়তে পারে ভারত। এর আগে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়েও তেল আমদানি নিয়ে দেশে দেখা দিয়েছিল সংকট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিম এশিয়ার এই যুদ্ধের আঁচ পড়তে চলেছে তেলের দামে। যুদ্ধের ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পাবে। আর সেখানেই ভারতের সমস্যার কারণ নিহিত রয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তেল আমদানির নিরিখে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। অপরিশোধিত তেলের একটা বড় অংশ প্রতি বছর বাইরের দেশের কাছ থেকে কেনে ভারত। সেখানে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও পাল্লা দিয়ে বাড়বে। এদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব পড়তে পারে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাতেও। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার বাড়াতে পারে। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পড়তে পারে ভারত, এমনটাই আশঙ্কা করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর শুধু তেল আমদানি নয়, জল, ওষুধপত্র, টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত এবং ইজরায়েলের মধ্যে লেনদেন চলে। ভারত থেকে বিভিন্ন ধাতু, পাথর, রাসায়নিক পদার্থ, জামাকাপড় নিয়মিত খরিদ করে ইজরায়েল। আবার ইজরায়েল থেকে তেল ছাড়াও, মুক্তো-সহ একাধিক দামি পাথর, রাসায়নিক এবং খনিজ পদার্থ, কৃষিকাজের উপযোগী বিভিন্ন উপাদান, যন্ত্রপাতি কিনে থাকে ভারত। এশিয়ায় ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক সঙ্গী এই দেশটিই। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ইজরায়েলে মোট ৭৮৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারত, আর সে দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে ২১৩ কোটি ডলারের পণ্য। এ ছাড়া, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, টিসিএস, ইনফোসিস, টেক মাহিন্দ্রা, সান ফার্মা, আদানি, উইপ্রোর মতো ভারতীয় সংস্থাগুলি ইজরায়েলে বিনিয়োগ করেছে। ফলত যুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চললে আর্থিক ক্ষেত্রে ভারতের উপর যে বড় আঘাত আসবে, তা বলাই বাহুল্য।