সামনেই দেশের লোকসভা নির্বাচন। আর তার আগেই ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। যা চব্বিশের ভোটযুদ্ধের আগে একপ্রকার ‘সেমিফাইনাল’। ইতিমধ্যেই রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা এবং মিজোরাম— পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সাংবাঠিক বৈঠক করে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ছত্তীসগঢ় বাদে বাকি চার রাজ্যে এক দফাতে ভোট হবে। এই ৫ রাজ্যের ফলাফল লোকসভা ভোটের ফলকে প্রভাবিত করতে পারে বলেই মত ভোটপণ্ডিতদের অনেকের।
মধ্যপ্রদেশে এক দফায় ভোট হতে চলেছে ১৭ নভেম্বর। ২৩ নভেম্বর রাজস্থানের সব ক’টি বিধানসভায় এক দফাতে ভোট হবে। তেলঙ্গানায় ভোট হবে ৩০ নভেম্বর। মিজ়োরামে ভোটগ্রহণ হবে ৭ নভেম্বর। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে ছত্তীসগঢ়েই কেবল দু’দফায় ভোট হবে— ৭ নভেম্বর এবং ১৭ নভেম্বর। ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যেরই ভোটের ফলঘোষণা ৩ ডিসেম্বর। প্রসঙ্গত, রাজ্যগুলির মধ্যে মিজ়োরাম বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৭ ডিসেম্বর। বাকি রাজ্যগুলিতে বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে জানুয়ারিতে।
প্রসঙ্গত, ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা আসন ৯০টি। ২০১৮ সালে প্রথম দফার মাওবাদী উপদ্রুত ১৮টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল ১২ নভেম্বর। আর দ্বিতীয় দফার ৭২টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল ২০ নভেম্বর। ১৫ বছর বিরোধী থাকার পর ২০১৮ সালে ছত্তীসগঢ়ে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যূত করে শাসক আসনে বসে কংগ্রেস। বিজেপির রমেন সিংহকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন ভূপেশ বাঘেল। সেবার ৯০ বিধানসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬৮টি। বিজেপি পেয়েছিল ১৫টি। সিপিআই, বিসিপি এবং জেসিসি জোট পেয়েছিল ৫টি আসন।
আগেরবার ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার ভোট হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর। সেই ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস। তারা পেয়েছিল ১১৪ আসন। অন্য দিকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর বিজেপি জিতেছিল ১০৯টি আসন। তবে দেড় বছরের মাথাতেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সাহায্যে কংগ্রেসের বিধায়ক ভাঙিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের সরকারের পতন ঘটায় বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির শিবরাজ সিংহ চৌহান। আসন্ন নির্বাচনে সেই রাজ্যে সরাসরি লড়াইয়ে থাকছে বিজেপি এবং কংগ্রেস।
২০১৮ সালের ৪০ আসনের মিজোরামেও বিধানসভা নির্বাচন সংগঠিত হয়েছিল ২৮ নভেম্বর। তাতে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে সরিয়ে সরকার গঠন করে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)। মুখ্যমন্ত্রী হন এমএনএফ নেতা জোরামথাঙ্গা। তাঁর দল ২৬টি আসন জিতেছিল। অন্য দিকে কংগ্রেস জিতেছিল মাত্র ৫টি আসন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও সেখানে ক্ষমতাসীন এমএনএফ-এর সঙ্গেই কংগ্রেসের মূল লড়াই।
২০১৮ সালে ২০০ আসনের রাজস্থানে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর। যাতে অশোক গেহলটের নেতৃত্বে বিজেপির বসুন্ধরা রাজে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিধানসভা দখল করে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন গেহলট। সেবার মোট ১০০টি আসনে জয় পেয়েছিল হাত শিবির। বিজেপি জিতেছিল ৭৩টি আসন। তবে এ বার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি। অন্য দিকে গদি বাঁচাতে মরিয়া কংগ্রেসও। রণকৌশল তৈরি করে আসরে নেমেছে তারা। আসন্ন নির্বাচনে সে রাজ্যে যে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তা বলাই বাহুল্য।
অন্যদিকে, বর্তমানে তেলঙ্গানায় ক্ষমতায় রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। সেখানে এবার ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কংগ্রেস এবং বিজেপির ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা। ২০১৪ সালের ২ জুন অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে তেলঙ্গানা। মুখ্যমন্ত্রী হন কেসিআর। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা টিকিয়ে রেখে দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। সেবার ১১৯ আসনের মধ্যে ৮৮টি আসনে জিতেছিল বিআরএস (তখন নাম ছিল টিআরএস বা তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি)। কংগ্রেস জিতেছিল ১৯টি।