বাংলার প্রতি মোদী সরকারের ক্রমাগত বঞ্চনাপ্রবণ আচরণের প্রতিবাদ ইতিমধ্যেই দৃঢ়তর আন্দোলনের পথে হেঁটেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। রাজ্যপালের সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে ধর্নামঞ্চে টানা ৫ দিন বসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষমেশ আজ, সোমবার বিকেল ৪টের সময় ২০-৩০ লক্ষ চিঠি, ৩০ জন প্রতিনিধি ও সাত বঞ্চিতকে নিয়ে রাজ্যপালের দরবারে হাজির হলেন তিনি। সূত্রের খবর, প্রায় ২০ মিনিট ধরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস৷ তারপরেই দিল্লী রওনা দেওয়ার কথা তাঁর৷ জানা গিয়েছে, এদিন রাজ্যপাল তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে আশ্বাস দিয়েছেন, তৃণমূলের তরফে যে সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন৷ বাংলার মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
প্রসঙ্গত, এদিন নির্দিষ্ট সময় বিকেল ৪টের সময় রাজভবনে প্রবেশ করে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল৷ প্রত্যেক প্রতিনিধির হাতেই ছিল কম করে ২০০-৩০০টি চিঠি৷ সূত্রের খবর, এদিন রাজ্যপালের সামনে বেশ কিছু প্রশ্ন রাখা হয় তৃণমূলের তরফে৷ প্রথমত, ২০ লক্ষ মানুষ আদৌ কি ১০০ দিনের কাজ করেছেন? যদি করে থাকেন, তা হলে কোন আইনের কোন ধারায় তাঁদের টাকা দীর্ঘ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে? তাছাড়া, অভিষেক দাবি করেন, আইন অনুযায়ী টাকা মেটাতে দেরি হলে নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হয়। সেই টাকা দিতে হবে বঞ্চিতদের৷ রাজ্যপালের মাধ্যমে এই কথাগুলিই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে চান বলে ভিতরে যাওয়ার আগে জানান অভিষেক৷ বৈঠক চলাকালীন রাজ্যপালের হাতে একটি স্মারকলিপি ও বঞ্চিতদের চিঠি তুলে দেওয়া হয় তৃণমূলের তরফে৷ বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংসদ সৌগত রায় জানান, বৈঠক আশাব্যঞ্জক৷ এরপরে তৃণমূলের কর্মসূচি কী হবে, তা পরবর্তী ক্ষেত্রে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতেই উত্তরবঙ্গ ও দিল্লি সফর সেরে কলকাতায় ফিরেছিলেন রাজ্যপাল৷ ফিরেই তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যে কেউ আসতে পারেন, কিন্তু, তাঁদের অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা মেনে দেখা করতে আসতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের ৩ জন প্রতিনিধি আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁরা চান, আমি যেন তাঁদের নেতার সঙ্গে রাজভবনে দেখা করি। আমি তাদের দার্জিলিঙে রাজভবনে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। মনে হয় তাঁরা এখানে আসতে চান না। আমি সেটা বুঝেছি।’’ অন্যদিকে, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে বঞ্চিতদের হাতে লেখা চিঠি তুলে দিতে চেয়ে এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বকেয়া না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ৫ দিন আগেই রাজভবন অভিযান করেছিলেন অভিষেক৷ কিন্তু, সেই সময় রাজ্যপাল সেখানে না থাকায় ধর্নামঞ্চ বেঁধেই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ রাজ্যপাল শহরে ফেরার দিনেই তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাতের জন্য সময় দেন৷ রবিবার রাতেই তৃণমূল কংগ্রেসকে ই-মেইল করে রাজভবন জানায় সোমবার বিকেল ৪টের সময় তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। সেই মতো এদিন প্রতিনিধি সাংসদ-বিধায়ক, ৭ বঞ্চিত ও ২০-৩০ লক্ষ চিঠি নিয়ে রাজভবনে পৌঁছন অভিষেক৷ যদিও এদিন রাজভবনের তরফে ভিতরে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার রদ করা হয়েছিল। দেওয়া হয়নি মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশের অনুমতিও।