প্রকৃতির রোষে বিপর্যস্ত সিকিম। তিস্তার জল বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একাধিক জায়গায়, পাহাড়ি পথের দেখা দিয়েছে ধস-ভাঙন। এমনকী বাংলা ও সিকিমের সীমানায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ভেঙে গিয়েছে। বিপর্যয়ের জেরে এখনও পর্যন্ত ৬ জওয়ান সহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে প্রশাসন। এর জন্য দায়ী কে বা কারা? ইতিমধ্যেই এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, হিমবাহ সৃষ্ট দক্ষিণ লোনক হ্রদ নিয়ে গত ১০ বছর ধরেই মিলছিল অশনি সঙ্কেত। নানা বিশেষজ্ঞ সংস্থার সতর্কবার্তাও এসেছে বারবার। বিপদ এড়াতে কী করতে হবে, তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনকে (সিডব্লুসি)। এমনকী গত ১৭-২৮ সেপ্টেম্বর, মাত্র ১১ দিনে হ্রদটি যখন আরও প্রায় ৬ হেক্টর বিস্তৃত হয়েছিল, তখনই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেই হুঁশিয়ারি কানে তোলেনি মোদী সরকার। চালানো হয়নি নজরদারিও। আর তার জেরেই মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিকিম-উত্তরবঙ্গজুড়ে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১। এর মধ্যে ১১ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে সিকিমের বিভিন্ন অংশে। গজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজ থেকে পাওয়া গিয়েছে তিনজনের দেহ। এবং আরও সাতটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ময়নাগুড়ির দোমোহনি থেকে।
সূত্রের খবর, ২৬০ ফুট গভীর হয়ে পড়েছিল লেকটি। অর্থাৎ প্রায় ১০ তলা বাড়ির সমান উচ্চতার জল জমেছিল সেখানে। তার চাপে যে কোনও মুহূর্তে ফেটে পড়ে বড়সড় বিপর্যয় ঘটাবে সাউথ লোনক লেক, এমনটাও জানানো হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের তরফে। দাওয়াই ছিল একটাই— ড্রেন আউট বা লেকের জল বের করে দেওয়া। সিকিম সরকারের পরিবেশ দফতরের দাবি, চীন (তিব্বত) সীমান্তের দুর্গম অংশে ১৭ হাজার ১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লেকটি। ইয়াকে মালপত্র বোঝাই করে চারদিনের হাঁটাপথে সেখানে পৌঁছতে হয়। সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে লেকের জল পাম্প করে বের করতে টিম পাঠানো হয়েছিল সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে অত্যাধুনিক ‘সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প’ বসানো যায়নি। সাধারণ সাকশন পাম্প বসিয়ে কাজ সারতে হয়েছিল। তাতে যে সমস্যা মেটেনি, মঙ্গলবারই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।