গত মঙ্গলবার সময় দিয়েও দিল্লির কৃষি ভবনে তৃণমূল প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জয়োতি। উলটে কৃষি ভবন থেকে দিল্লি পুলিশ তাঁদের তুলে নিয়ে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু সেনদের। এর প্রতিবাদে সেদিনই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন, ৫ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার একই দাবিতে রাজভবন অভিযান হবে। সঙ্গে থাকবেন ১০০ দিনের কাজে বঞ্চিত মানুষরা। রাজ্যপালের কাছে দাবিদাওয়া তুলে ধরা হবে। সেই মতই গতকাল সকাল থেকে অভিষেকের নেতৃত্বে রাজভবনের নর্থ গেটে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকরা। আর সেখানেই যেন দেখা গেল ‘ফ্ল্যাশব্যাক’।
মঞ্চের ভিড়ের মধ্যে একেবারে পিছনের সারিতে বসে সাদা ফুলস্লিভস শার্ট, ধূসর ট্রাউজার্স আর গলায় ফেরতা দিয়ে গাঢ় নীল উত্তরীয় পরা এক মধ্য তিরিশের যুবক। তাঁকে ঘিরে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদ-কাউন্সিলররা। যা দেখে প্রায় দু’দশক আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ধর্মতলার মোড়ে মেট্রো সিনেমাহলের উল্টোদিকে এমনই এক ধর্নামঞ্চ। সেখানে সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে অনশনে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যতক্ষণ না জমি ফেরানো হবে, ততক্ষণ অনশন চলবে। ঠিক যেমন বৃহস্পতিবারের আরও এক ধর্নামঞ্চ থেকে তাঁর ‘উত্তরসূরি’ ঘোষণা করলেন, ‘যতক্ষণ না রাজ্যপালের সঙ্গে আমরা দেখা করতে পারব, ততক্ষণ আমি এই ধর্নামঞ্চ ছাড়ব না।’
ধর্মতলার অনশন মঞ্চের আগেও মমতা এমন বহু ধর্নায় অংশ নিয়েছেন। পরেও। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে এমন সিদ্ধান্ত এই প্রথম! গত মঙ্গলবার রাতে দিল্লিতে তাঁদের হেনস্থার প্রতিবাদে সেই রাতেই অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন, বৃহস্পতিবার ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচির কথা। ঠিক ছিল, মিছিল করে এসে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে তাঁরা স্মারকলিপি দেবেন ‘বাংলার গরিব মানুষের বকেয়া টাকা’ ফেরত দেওয়ার জন্য। যে দাবি তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানাতে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। কিন্তু অভিষেক ছাড়ার পাত্র নন। রাজ্যপাল ‘কেন্দ্রের প্রতিনিধি’। তাই তিনি ঘোষণা করেন, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ওই স্মারকলিপি দেবে তৃণমূল।
সেই মতোই বৃহস্পতিবার জনস্রোত নিয়ে ডালহৌসির রেড ক্রস প্লেসে রাজভবনের সামনে হাজির হন অভিষেক। ততক্ষণে সেখানে মঞ্চ বাঁধা হয়ে গিয়েছে। তখন থেকেই খানিকটা আন্দাজ করা গিয়েছিল যে, অভিষেক রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসে পড়তে পারেন। কারণ, ততক্ষণে সকলে জেনে গিয়েছেন যে রাজ্যপাল রাজভবনে নেই। দিল্লি থেকে উত্তরবঙ্গে এসে বন্যা পরিস্থিতি দেখে আবার দিল্লিতেই ফিরে গিয়েছেন তিনি। কবে ফিরবেন, তা খুব একটা নিশ্চিত নয়। সম্ভবত তখন থেকেই গোটা বাংলার ‘ফ্ল্যাশব্যাকে’ ফিরে যাওয়া শুরু। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। যত সময় এগিয়েছে, ততই অভিষেকের মধ্যে প্রকট হয়েছে ‘মমতা ছায়া’। তৃণমূল সূত্রের খবর, অসুস্থতার জন্য দলনেত্রী নিজে কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারলেও বাড়ি থেকে গোটা কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। আর অভিষেকের এই আন্দোলনেও তিনি খুশি।