এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কের আইনি সমাধানের আগেই আসামের ১৪টি লোকসভা এবং ১২৬টি বিধানসভা আসন পুনর্বিন্যাসের (ডিলিমিটেশন) কাজ শুরু করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তাদের তরফে এ সংক্রান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করে চলতি বছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত খসড়া তালিকা সম্পর্কে ‘পরামর্শ এবং আপত্তি’র কথা জানাতে বলা হয়েছিল। ৩১টি জেলার বাসিন্দাদের কাছ থেকে আসন পুনর্বিন্যাস করা নিয়ে ৪৬৭টি পরামর্শ এবং আপত্তি পেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলিও আপত্তি জানিয়েছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই কমিশন আসন পুনর্বিন্যাস করছে। কিন্তু কোনও আপত্তিতেই আমল দেওয়া হয়নি। বিরোধীদের হাজারও অভিযোগ সত্ত্বেও অসমে লোকসভা ও বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস হল।
গত ২০ জুন আসন পুনর্বিন্যাসের খসড়া প্রস্তাব প্রকাশিত হয়। তারপর থেকেই এই নিয়ে নানা রকম আপত্তি এবং একে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন দলের নেতারা। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে ২০০১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাসের হয়েছে। মোট লোকসভা এবং বিধানসভার আসনের সংখ্যা একই থাকলেও কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। লোকসভার ১৪টি আসনের মধ্যে তফসিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য একটি এবং তফসিলি জনজাতির প্রার্থীদের জন্য দু’টি আসন সংরক্ষিত। বিধানসভার ১২৬টি আসনের মধ্যে তফসিলি জাতি এবং তফসিলি জনজাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা যথাক্রমে নয় এবং ১৯। বলাবাহুল্য এরপরেই প্রশাসনিক পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে। বিভিন্ন জেলার মধ্যে উপজেলা গঠন করা হবে বলেও শোনা যাচ্ছে।
বিরোধীদের আশঙ্কা আসন পুনর্বিন্যাসে মুসলমান জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কমবে, যার সরাসরি ফায়দা পাবে বিজেপি। সে’রাজ্যের মুসলমান জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন, এমনভাবে আসন বিন্যাস করা হয়েছে যাতে হিন্দু নির্বাচনী কেন্দ্র আর মুসলমান নির্বাচনী কেন্দ্র আলাদা আলাদা হয়। পুনর্বিন্যাসের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এবং আসামের জনজাতি সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ আসামের তিন জেলায় একটি করে আসনও বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে অহমিয়া ভাষাভাষি সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় আসন সংখ্যা ১৫ থেকে ১৩-তে কমিয়ে আনা হয়েছে।
করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দির মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা থেকে একটি করে আসন কমিয়ে আনা হয়েছে। তিন বিধানসভা কেন্দ্র, যেখান থেকে সাধারণত মুসলমান জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হতেন, তা তফসিলি জাতি ও উপজাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। যা কার্যত সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপ। তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত বিধানসভা আসনগুলিকে আট থেকে নয় এবং তফসিলি উপজাতিদের জন্য ১৬ থেকে বাড়িয়ে ১৯ করা হয়েছে। বর্তমানে আসামে ৩১জন মুসলিম বিধায়ক রয়েছে, কেউই বিজেপির নয়। পুনর্বিন্যাসের আগে, অসমের ৩৫ বিধানসভা আসন এবং ১৪ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টিতে মুসলমানরা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করত। বিরোধীদের বক্তব্য, ১০-১১ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন হ্রাস পেয়েছে।