গত ৫ মাস ধরে জাতি হিংসার আগুনে জ্বলছে উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি রাজ্য মণিপুর। ইতিমধ্যেই কুকি আর মেইতেইদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। ঘটেছে গণধর্ষণ, জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মতো ঘটনাও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যতই দাবি করুক না কেন সেখানে শান্তি ফিরেছে, বাস্তব বলছে এখনও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি মণিপুরের। গত সাড়ে ৪ মাসে সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১৭৫ জনের, নিখোঁজ ৩৩। এহেন পরিস্থিতিতে শান্তিরক্ষায় নিযুক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী অসম রাইফেলসকে সরানোর দাবি তুলল মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেইরা। তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, ধারাবাহিক ভাবে কুকিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে অসম রাইফেলস।
জানা গিয়েছে, মণিপুর থেকে অসম রাইফেলস সরানোর দাবিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দ্বারস্থ হয়েছে মেইতেই সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, ওই কেন্দ্রীয় বাহিনী ধারাবাহিক ভাবে কুকিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। মেইতেই জনগোষ্ঠীর নাগরিক সংগঠনগুলি যৌথমঞ্চ ‘কোঅর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি’ বা ‘কোকোমি’ প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে মণিপুর থেকে অসম রাইফেলস প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে। এর আগে অগস্ট মাসেও মণিপুরের ৪০ মেইতেই বিধায়ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে অসম রাইফেলসের পরিবর্তে অন্য কোনও বিশ্বাসযোগ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলেন।
এদিকে মণিপুর পুলিশের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, গত সাড়ে চার মাসের হিংসায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৭৫ ছুঁয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ জন নিহতের দেহ শনাক্ত করাই যায়নি। আহত ১,১১৮। গোষ্ঠীহিংসা কবলিত এলাকাগুলি থেকে নিখোঁজ হয়েছেন ৩৩ জন। গোষ্ঠীহিংসার ঘটনায় মোট ৫১৭২টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশি রিপোর্টে দাবি। এর মধ্যে ৪৭৮৬টি বাড়ি এবং দফতরের পাশাপাশি ৩৮৬টি ধর্মস্থান রয়েছে। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর তল্লাশি অভিযানে ৩৬০টি বাঙ্কার ধ্বংস করা হয়েছে বলে পুলিশ রিপোর্ট জানাচ্ছে। তবে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে সরকারি অস্ত্র লুঠ। হিংসা চলাকালীন বিভিন্ন থানা এমনকি, জেলা পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে ৫,৬৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রায় ৫ লক্ষ গোলাগুলি লুট হয়েছে।