২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর থেকেই শক্তিক্ষয় শুরু হয়েছিল তাদের। তারপর ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন এবং ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি সিপিএম। আর একুশের বিধানসভা নির্বাচনই কিংবা তারও আগে উনিশের লোকসভা ভোটে তো খাতাই খুলতে পারেনি। সামনের লোকসভা ভোটেও একক শক্তিতে আসন জেতার কোনও আশা দেখা যাচ্ছে না। মাত্র দু’দশক আগেও গোটা বাংলা যাদের ‘দুর্জয় ঘাঁটি’ বলে ভূ-ভারতে পরিচিত ছিল, সেখানে ‘সিপিএমের এলাকা’ বলে এখন এক-আধটা বিধানসভাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেন এই পরিস্থিতি হল? কী ভাবে এর থেকে পরিত্রাণ? রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর এক যুগ পরে দাঁড়িয়ে এটাই এখন সিপিএমের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ।
সিপিএম নেতৃত্বের আলোচনায় বার বার যা ফিরে আসছে তা হল— যেটুকু ভোট দলের এখনও রয়েছে, সেটুকুও রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় জেতার মতো ভোটঘনত্ব নেই। মঙ্গলবার থেকে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক হয়ে গেল আলিমুদ্দিনে। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে পঞ্চায়েত বা ধূপগুড়ি নির্বাচন যেমন ছিল, তেমনই ছিল সাংগঠিক কর্মসূচি সংক্রান্ত কথাবার্তা। বৈঠকে সে সব নিয়ে আলোচনা হলেও, রাজ্য নেতাদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় উদ্বেগ ফুটে উঠেছে এই ‘ছন্নছাড়া’ ভোটব্যাঙ্ক নিয়েই। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের মাঝে মধ্যাহ্নভোজের সময় উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জন নেতা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেছেন, ‘কংগ্রেসের তবু এখনও গড় রয়েছে। আমাদের নেই।’
বামেদের ভোট কংগ্রেসের থেকে বেশি হলেও তা নির্দিষ্ট কোনও এলাকায় পুঞ্জীভূত নয়। এখনও যা ভোট বামেদের দিকে রয়েছে, ২০২১-এর পর থেকে দক্ষিণবঙ্গে যেটুকু ভোট বেড়েছে, তা সবটাই ছড়ানো। সিপিএমের নেতাদের বক্তব্য, এই ছড়িয়ে থাকা ভোট রাজনৈতিক ভাবে ইতিবাচক হলেও, আসন জয়ের জন্য তা মোটেই যথেষ্ট নয়। কংগ্রেসের ভোটের বড় অংশ মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরে অনেকটা ঘনীভূত জায়গায় রয়েছে। যা তাদের আগামী লোকসভা ভোটেও সুবিধা দিতে পারে। সিপিএমের রাজ্য মম্পাদকমণ্ডলী তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী এই ভোট ছড়িয়ে থাকার বিষয়টি মেনে নিয়েই বলেন, ‘মানুষের আস্থা ফিরে পেতে আমাদের সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনও পথ নেই। তবে এটাও বাস্তব, পঞ্চায়েত ভোটে এত সন্ত্রাসের মধ্যেও রাজ্যের অনেক ব্লকে আমাদের ভোট ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে।’