রাজনৈতিক স্বার্থে ‘ইন্ডিয়া’ নাম নিয়ে পরিকল্পিত ভুয়ো প্রচার চালাচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। আমাদের দেশের ইন্ডিয়া নামের সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আদতে কোনও সম্পর্কই নেই। ভারত বনাম ইন্ডিয়া বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এবার তথ্য দিয়ে এই বক্তব্য তুলে ধরলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদরা। তাঁদের স্পষ্ট মত, ইন্ডিয়া নামের সঙ্গে ব্রিটিশদের কোনও সম্পর্কই নেই। ভারত নামের মতো মতো ইন্ডিয়া নামও আমাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ঐতিহাসিকরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, দেশের সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত। অর্থাৎ দুটি নামই দেশের সংবিধান এবং ইতিহাসের অংশ। পাশাপাশি দুটি নামই সম্পূর্ণ বৈধ। এর সঙ্গে ঔপনিবেশিক অতীতের কোনও সম্পর্ক নেই। ‘ইন্ডিয়া’ নাম ব্রিটিশদের দেওয়া বলে মোদী সরকার যে প্রচার চালাচ্ছে তা সর্বতোভাবে মিথ্যা।
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিসের সঙ্গে যোগ ছিল ইন্ডিয়া শব্দের। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব বলেছেন, গ্রিকরা এই নাম ব্যবহার করেছে, পারস্যতে এটি ব্যবহৃত হত। মেগাস্থিনিস-সহ ভারতে আসা পর্যটকরা ইন্ডিয়া বলে ভারতবর্ষকে উল্লেখ করতেন। ইন্ডাস বা সিন্ধু নদ থেকেই কালক্রমে এসেছে ইন্ডিয়া নাম।
ইতিহাসবিদদের মতে, ভারতবর্ষ নামে যে ভূখণ্ড, সেটিকে প্রাচীনকাল থেকে নানা নামে চিহ্নিত করা হয়ে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে জম্মুদ্বীপ, ভারতখণ্ড, হিমবর্ষ, অজনাভবর্ষ, আর্যাবর্ত, হিন্দ, হিন্দুস্তান, ভারত, ইন্ডিয়া ইত্যাদি। সংস্কৃত ‘বর্ষ’ শব্দের অর্থ ভূখণ্ড। উল্লেখ্য সম্রাট অশোকের শিলালিপিতেও জম্মুদ্বীপের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আবার বিষ্ণুপুরাণে পাওয়া যায় ভারতের সীমারেখার বর্ণনা। ইতিহাসবিদদের মতে, ইন্ডিয়া এবং ইন্ডাস নাম পাওয়া যায় গ্রিক ইতিহাসবিদ মেগাস্থিনিসের বর্ণনায়। প্রাচীন ভারত নিয়ে লেখা তাঁর গ্রন্থের নামই ছিল ইন্ডিকা।
ঐতিহাসিক ইয়ান জে ব্যারো লিখেছেন যে, অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ মানচিত্রগুলিতে ইন্ডিয়া নামটির প্রচলন হতে থাকে। তার আগে, মুঘল আমলে তাদের শাসনাধীন এলাকাটিকে হিন্দুস্তান বলে চিহ্নিত করা হত। ইরফান হাবিব বলেছেন, ব্রিটিশদের সঙ্গে ইন্ডিয়া নামটি যুক্ত করা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’।