সম্প্রতি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে সংসদে রিপোর্ট পেশ করেছিল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা ক্যাগ। সড়ক প্রকল্প, গরিবের পেনশন থেকে শুরু করে অযোধ্যা উন্নয়ন পর্ষদ— সর্বত্র আর্থিক অনিয়মের রিপোর্ট দিয়েছিল তারা। এদিকে, বেকারত্বও এতটাই বেড়েছে যা গত পাঁচ দশকে দেখেনি দেশ। অন্যদিকে, হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। যা কমার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। তার পিছনে শাসক দল তথা তাদেরই সরকারের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ বেশ জোরালো। আবার হরিয়ানা-সহ দেশের নানা জায়গা থেকে সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, “আচ্ছে দিন” আনার স্বপ্ন ফেরি করে ২০১৪-য় ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তারপর ১০টা বছর কেটে গেল প্রায়। কিন্তু অবস্থা পাল্টাল না। তা সত্ত্বেও গত ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছেন, আমি নিশ্চিত, ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় জায়গা করে নেবে ভারত। অর্থনীতি আরও বেশি আত্মনির্ভর ও উদ্ভাবনী হয়ে উঠবে। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হবে মানুষ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা পরিষেবা মিলবে। অর্থাৎ আরও ২৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ এ-থেকে স্পষ্ট যে, মোদী ক্ষমতায় ফিরলেও এখনই ‘আচ্ছে দিন’ আসছে না দেশে। তিনি আরও বলেছেন, তখন দেশে দুর্নীতি, জাতিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতা বলে কিছু থাকবে না। এর থেকে স্পষ্ট, যে মোদী মেনে নিচ্ছেন এখনও দেশে এই সব আছে।
দেশে বেকারত্বের সমস্যাটি যে কত গভীরে তা বোঝা যায় নির্বাচনের আগে ‘রোজগার মেলা’র আয়োজন দেখে। প্রতিশ্রুতিমতো নতুন কর্মসংস্থান নয়, খালিপদে কর্মী নিয়োগ করে মুখরক্ষার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চলছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই মুহূর্তে ভারতে দু’কোটি থেকে কুড়ি কোটি নতুন কাজ তৈরি হওয়া প্রয়োজন। রোজগার মেলায় দশ লক্ষ চাকরির লক্ষ্য, ভোটের বাজারে নরেন্দ্র মোদির কতটা সুবিধা হবে, সে-প্রশ্ন সরিয়ে রেখে— একথা বলাই যায়, এতে দেশের বিশেষ উপকার হবে না। ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বছরে দু কোটি নতুন কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি জুমলায় পরিণত হয়েছে।
গবেষকরা হিসাব কষে দেখিয়েছেন, ২০১২ থেকে ২০১৮— এই ছ’বছরে ভারতে মোট কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ৯০ লক্ষ। স্বাধীন দেশের ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। বোঝা যাচ্ছে, বেকারত্বের দায়টিকে অতিমারির ঘাড়ে চাপানোর উপায় নেই। সেই দায় সুস্পষ্টভাবেই মোদী সরকারের, মানে সরকারি নীতির। যআ অতিমারি সংকটটিকে তীব্রতর করেছে। বেতনবৃদ্ধির গতি শ্লথ করেছে। কাজের বাজারে মেয়েদের সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর বেড়েছে ‘স্ব-নিযুক্ত’ কর্মীর সংখ্যা। ভারতের মতো অসংগঠিত ক্ষেত্র-নির্ভর অর্থব্যবস্থায় এ-এক পরিচিত বিপদ বলেই মনে করা হয়।