এ যেন মগের মুলুক! এবার সাধারন তন্ত্র দিবসের ঐতিহাসিক প্যারেডে অংশগ্রহণ করতে গেলে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে তাদের শর্তেই! হ্যাঁ, আর সেসব শর্ত এমনভাবে ঠিক করা হয়েছে যে প্যারেড থেকে বাংলার বাদ পড়া একপ্রকার নিশ্চিত। এই প্রেক্ষিতে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে অপদস্থ করতেই কেন্দ্রের এ এক নতুন চাল।
প্যারেডে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যগুলির সঙ্গে চুক্তি করতে রীতিমতো একটি মউ (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) বা চুক্তিপত্র তৈরি করেছে কেন্দ্র। ৭৫ তম সাধারণতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে পরপর তিন বছরের (২০২৪, ২০২৫ এবং ২০২৬) জন্য ট্যাবলো বাছাই, লালকেল্লায় ‘ভারত পর্ব’ এবং প্রত্যেক রাজভবনে ‘অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতেই চুক্তিবদ্ধ হতে হবে রাজ্যগুলিকে। অগস্ট মাসের মাঝামাঝি চুক্তিপত্রের খসড়া সহ একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রতিটি রাজ্যকে। তাদের কোনও মতামত থাকলে তা ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে জানাতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, ‘তুঘলকি সিদ্ধান্তে’ ক্ষুব্ধ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষমহল এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শীঘ্রই পদক্ষেপ নিতে চলেছে।
জানা গিয়েছে, রাজ্যগুলির জন্য আগামী তিন বছর কার্যকর থাকবে এই চুক্তি। কোনও রাজ্য শর্ত অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকছে কেন্দ্রের হাতে। দেশের ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ছ’টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চল বা ইস্টার্ন জোনে রাখা হয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা এবং বাংলাকে। খসড়ার ছ’নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, ইস্টার্ন জোন থেকে প্যারেডে ট্যাবলো প্রদর্শনের সুযোগ পাবে মাত্র দু’টি রাজ্য। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে সেই রাজ্যগুলি, যারা গত আট বছরের মোদী জমানায় তুলনামূলক কম সুযোগ পেয়েছে। ‘কর্তব্য পথে’ পরপর দু’বছর কোনও রাজ্যকে ট্যাবলো প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে। এসব শর্তের কারণে ২০২৪ সালে বাংলার ট্যাবলো রাজধানীর রাজপথে দেখতে পাওয়ার আশা ক্ষীণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা।
কারণ, বিগত আট বছরে বাংলা পাঁচবার এই সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু বিহার গত আট বছরে একবারও সুযোগ পায়নি। এই সময়কালে ঝাড়খণ্ড মাত্র একবার ট্যাবলো প্রদর্শন করেছে। তিনবার বাতিল হয়ে গিয়েছে ওড়িশার প্রস্তাবিত ট্যাবলো। ফলে শর্ত মানলে এবার বাংলার ট্যাবলো দেখতে পাওয়ার কথা নয়। সেই সঙ্গে রাজভবনের ‘অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’-এ অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিত করানোর কথাও বলা হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘কেন্দ্রের সরকারের এখন কাজই হয়েছে অবিজেপি বিভিন্ন রাজ্যের সরকারকে নানাভাবে অপদস্থ করা। রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে ওরা। এটা অন্যায়। সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজ্য থেকে ট্যাবলো পাঠানো হবে। সেখানেও বিজেপি রাজনীতি করলে কীভাবে চলবে!’