আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। যেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রায় ২৫টি দেশের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কূটনীতিক ও আমলারা। আর তাই আয়োজনের আতিশয্যে জলের মতো টাকা খরচ করছে মোদী সরকার। এমনকী দিল্লির বাঁদরদের সামলাতেও আলাদা দল গড়েছে কেন্দ্র। তৈরি করা হয়েছে মশানিধনের বিশেষ ‘টিম’ও।
প্রসঙ্গত, অতিথিদের দেবতাজ্ঞানে পুজো করে ভারত। সেই হিসাবে আগামী শনি-রবিবার দিল্লিতে ‘বড় পুজো’! আর সেই পুজোর আগে ‘আচমন’ বা শুদ্ধিকরণের ব্যবস্থাটি পাকা করেছে কেন্দ্র। ‘পুজো’র আয়োজন যদিও দিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপে। তবে অতিথি আপ্যায়নে গোটা রাজধানীই এখন অতিথিশালা। অতিথিদের জন্য সুনিশ্চিত করা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাও। যেমন অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য থাকছেন কম করে হাজার দশেক নিরাপত্তারক্ষী। এর মধ্যে রয়েছে রুফটপ স্নাইপারদের একটি দলও। ছাদের ওপর থেকে সন্দেহজনক গতিবিধির ওপর নজর রাখবেন এই নিপুণ লক্ষ্যভেদী বন্দুকধারীরা।
আবার ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে আকাশপথে হামলা রুখতে রাজধানীকে মুড়ে ফেলা হয়েছে অ্যান্টি ড্রোন ব্যবস্থাপনায়। ড্রোন-বিরোধী এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সহজেই যে কোনও জায়গায় ড্রোনের গতিবিধি সহজে চিহ্নিত করা যাবে। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবিরোধী ‘ব্ল্যাক ক্যাটস’ বাহিনীও দায়িত্বে থাকবে দিল্লির নিরাপত্তার। গত কয়েক দিন ধরেই চলছে তাদের মহড়া। হঠাৎ প্রয়োজনে কী ভাবে দ্রুত হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হবে। কীভাবেই বা হোটেলের ছাদে নেমে নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়বেন তাঁরা। সব কিছু বার বার দেখে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, অন্যান্য দিন দিল্লির রাস্তায় অটো, রিকশা, বাস, লরি, ট্রাক, ট্যাক্সির হর্নের শব্দে কান পাতা দায় হলেও আগামী শনি এবং রবিবার সেই শব্দদূষণ বিদেশি অতিথিদের অনভ্যস্ত কানে যন্ত্রণা দেবে না। ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, দিল্লির কেন্দ্রস্থলে একটি বড় অংশ জুড়ে গাড়ির গতিবিধিতে কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকবে। শহরের অন্যান্য অংশেও যানজট যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া, আগামী শনি এবং রবিবার অর্থাৎ ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দিল্লিতে। বন্ধ থাকবে দোকানপাটও। ফলে রাস্তায় যান চলাচল এমনিতেই কম থাকবে।
অন্যদিকে, জোরকদমে চলছে দেশের দারিদ্র ঢাকার চেষ্টাও। ৪০০০ গৃহহীন মানুষ, যাঁরা ব্রিজের নীচে বা রাস্তার পাশে অস্থায়ী আস্তানা বানিয়ে থাকতেন, তাঁদের জন্য তড়িঘড়ি আশ্রয় বানিয়েছে কেন্দ্র। দিল্লির রাস্তায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল বহু ফোয়ারা। সেই সব ফোয়ারায় আবার নতুন করে শুরু হয়েছে ধারাপাত। জং আর জ্বলে যাওয়া রঙের উপর তাদের গায়ে পড়েছে নতুন রঙের পোঁচ। এছাড়া দিল্লিকে সাজানোর জন্য বসানো হয়েছে ৭০ হাজার ফুলের টব। তাতে জল দেওয়ার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে ৩৫টি জলের ট্যাঙ্ক।
তবে এই ব্যবস্থাপনায় আলাদা করে উল্লেখ করতে হয় ‘মাঙ্কি মেন’-এর কথা। দিল্লির রাজপথে বাঁদর তাড়ানোর জন্য এই বিশেষ বাহিনী তৈরি করেছে কেন্দ্র। দিল্লিতে হামেশাই পথচারীদের হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে নিয়ে যায় বাঁদররা। ফুল-ফলের গাছও নষ্ট করে। কিন্তু জি-২০ সম্মেলনের আগে রাষ্ট্রনেতাদের জন্য সাজানো-গোছানো ব্যবস্থাপনা যাতে তারা ভন্ডুল করতে না পারে, সে কাজই করবেন ‘মাঙ্কি মেন’রা। এক বিশেষ প্রজাতির লেঙ্গুরকে ভয় পায় এই বাঁদরেরা। মোট ৩০ জন সদস্যের এই বাহিনীর একমাত্র কাজ হবে ওই লেঙ্গুরদের মতো শব্দ করে বাঁদরদের ভয় দেখিয়ে দূরে রাখা।
তবে বাঁদরদের তফাতে রাখার ব্যবস্থা করতে পারলেও পথকুকুরদের সামলানোর ব্যবস্থা করতে পারেনি মোদী সরকার। কেন্দ্র পথকুকুরদের ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতেই সরব হন দিল্লির পশুপ্রেমীরা। যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। গত কয়েক সপ্তাহে এক বিশেষ ধরনের মাছও ঝাঁকে ঝাঁকে আনানো হয়েছে দিল্লিতে। সেই সব মাছ ছাড়া হয়েছে প্রগতি ময়দানের ফোয়ারার জলে। কেন্দ্র সূত্রে খবর, এই সব মাছের মূল খাবার হল মশার লার্ভা। জি-২০ সম্মেলন চলাকালীন যাতে দিল্লিতে মশার উৎপাত না হয় তার জন্যই এ হেন ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।