অভাবনীয় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে পৌঁছে গেল ইস্টবেঙ্গল। মঙ্গলবার একটা সময় জয়ের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ০-২ পিছিয়ে থাকার পর ম্যাচের ৭৬ মিনিটে নাওরেম ও সংযুক্তি সময়ে নন্দকুমারের গোলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে প্রভসুখন গিলের অনবদ্য গোলকিপিংয়ের সুবাদে বাজিমাত করে লাল-হলুদ শিবির। বৃহস্পতিবার ডুরান্ডের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে মোহনবাগান ও গোয়া। সেই ম্যাচে মোহনবাগান জিতলে রবিবার ডুরান্ডের ফাইনালে ফের ডার্বির স্বাদ পাবেন ফুটবলপ্রেমীরা। এদিন যুবভারতীতে খেলার শুরুটা দেখে মনে হল নর্থইস্ট নয়, ইস্টবেঙ্গলই বোধহয় অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে নেমেছে। প্রথম ১৫ মিনিটেই ইস্টবেঙ্গলের গোল লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি আক্রমণ তুলে আনে নর্থইস্ট। খেলার শুরুতেই লাল-হলুদ রক্ষণকে বোকা বানিয়ে বক্সে ঢুকলেও গোল লক্ষ্য করে শট মারতে পারেননি ফাল্গুনী সিংহ। দু’দলই মাঝমাঠ দখলের চেষ্টা করছিল। সেখানে খানিকটা এগিয়ে ছিল উত্তর-পূর্বের দল। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠছিলেন মিগুয়েল জাবাকো, মনবীর সিংহেরা। উল্টো দিকে ইস্টবেঙ্গলের দুই প্রান্ত ধরে খুব বেশি আক্রমণ হচ্ছিল না। যে কয়েকটি আক্রমণ মন্দার রাও, নিশু কুমারেরা তুলে আনেন তা-ও নর্থইস্টের রক্ষণে আটকে যায়। মহেশ নাওরেম সিংহ এই ম্যাচে ডান প্রান্ত ধরে খেলছিলেন। যে কয়েকটি আক্রমণ হয় তাতে ভূমিকা ছিল নাওরেমের। বক্সের বাইরে থেকে লুকাস পারডোর জোরালো শট বাঁচিয়ে দেন নর্থইস্টের গোলরক্ষক মিচু মিরশাদ। এই মিরশাদ ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন গোলরক্ষক। মাঝেমধ্যে ভুল পাস, এলোমেলো ফুটবল দেখা যাচ্ছিল যুবভারতীতে। তার মাঝেই ২২ মিনিটের মাথায় চমক দেখাল নর্থইস্ট। বাঁ প্রান্তে বক্সের বাইরে বল পান ফাল্গুনী। ফিতরে ঢুকে রক্ষণের উপর দিয়ে বক্সের ভিতরে বল ভাসিয়ে দেন তিনি। লাল-হলুদ ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে হেডে গোল করেন জাবাকো। এগিয়ে যায় নর্থইস্ট। গোল শোধ করার সুযোগ পেয়েছিলেন জাভিয়ের সিভেরিয়ো। কিন্তু নাওরেমের ক্রস নামাতে পারেননি তিনি। বল তাঁর মাথায় রেখে বেরিয়ে যায় বাইরে।
এরপর ম্যাচের ৩০ মিনিটের মাথায় আক্রমণের জোর একটু বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। ৩৬ মিনিটের মাথায় বক্সে ভাল জায়গায় বল পান মন্দার। সরাসরি গোলরক্ষক মিরশাদের হাতে মারেন তিনি। সময় কেটে যাচ্ছিল। গোলের মুখ খুলতে না পেরে অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে গোল করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। মাঝেমধ্যেই ফুটবলারেরা চোট পাওয়ায় খেলায় বিঘ্ন ঘটছিল। শেষ পর্যন্ত ০-১ গোলে পিছিয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-হলুদ ব্রিগেড। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে গোল করার একটা তাগিদ দেখায় ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধের থেকে ভাল ফুটবল শুরু করে তারা। লাল-হলুদ সমর্থকেরা ভেবেছিলেন খেলার ছবিটা হয়তো বদলাবে। কিন্তু কোথায় কী! ৫৬ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে লম্বা বল ধরে গোল করেন নর্থইস্টের ফাল্গুনী। ইস্টবেঙ্গলের গোটা রক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখছিল। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় নর্থইস্ট। পুরো ম্যাচে কিছুতেই মাঝমাঠের দখল নিতে পারছিলেন না লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। ভুল পাসের কারণেই দখল হারাচ্ছিলেন তাঁরা। ফলে আক্রমণ দানা বাঁধছিল না। যে টুকু আক্রমণ হচ্ছিল, নাওরেমের প্রান্ত ধরে। মাঝে মাঝে প্রতি আক্রমণ থেকে সুযোগ পাচ্ছিল নর্থইস্টও। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারছিল না তারা। বোঝা যাচ্ছিল, দু’দলের ফুটবলারেরাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ৭৬ মিনিটের মাথায় এক গোল শোধ করে ইস্টবেঙ্গল। ক্লেইটন সিলভার ক্রস থেকে নাওরেমের শট নর্থইস্টের ডিফেন্ডার দীনেশ সিংহের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়। গোল করার পর চাপ আরও বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। ক্লেইটন ভাল খেলছিলেন। তিনি নামায় আক্রমণের চাপ বাড়াচ্ছিল ইস্টবেঙ্গল। উল্টো দিকে গোল খেয়ে সম্পূর্ণ ভাবে রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করে নর্থইস্ট। তাতে আরও চাপে পড়ে যায় তারা। সময় যত এগোচ্ছিল তত গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তখনও ভুল করছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। বিশেষ করে নর্থইস্টের আক্রমণ ভাগে এসে তালগোল পাকিয়ে ফেলছিলেন তাঁরা। সারা ম্যাচে চার থেকে পাঁচ বার তিনটি ভাল ঠিক পাস দিয়েছে তারা। তার পরেও খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সংযুক্তি সময়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন নর্থইস্টের জাবাকো। সংযুক্তি সময়ে শেষ মুহূর্তে হেডে গোল করে সমতা ফেরান নন্দকুমার। টাইব্রেকারে নায়ক হয়ে উঠলেন ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক প্রভসুখন। নর্থইস্টের তৃতীয় শট বাঁচিয়ে দেন তিনি। শেষ শট নিতে যান নন্দকুমার। ঠাণ্ডা মাথায় শট নিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।
