স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাংলাকে ফের নতুন দিশা দেখাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্যোগে গড়ে উঠতে চলেছে রাজ্যের প্রথম বোন ব্যাঙ্ক। মানুষের ভাঙা জায়গায় ব্যবহার হবে মানুষেরই হাড়। উল্লেখ্য, মৃত্যুর পর মানুষের দেহ বহু কাজে ব্যবহার হয়। সচেতনতার ফলে বর্তমানে বহু মানুষ দেহদান করেন। মৃতদেহকে সংরক্ষণ করে কখনও গবষণা আবার কখনও চলে চিকিৎসা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই দেহদান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এতদিন কাজে লাগত সেই দেহের নানা অঙ্গ, চামড়া। কিন্তু এবার থেকে কাজে লাগবে হাড়ও। সেই হাড় ব্যবহার করে সুস্থ থাকবেন অন্য মানুষ। অস্থি অন্ত্রোপচার করার সময় বর্তমানে সেখানে প্লেট লাগানো হয়। অস্থিসন্ধিতে যে প্লেট বসানো হয়, সেই থেকে কোনও কোনও রোগী সংক্রমণের কবলে পড়েন। তখন সংক্রমণ কমানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন বা স্যালাইনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে ওষুধ দেওয়া হয়। এবার সেই সমস্যা দূর করতেই নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হল। এই বিষয়ে আরও এগোতে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। আইআইটি খড়গপুরের টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সঙ্গে আরজি কর অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকদের একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভাঙা হাড়ের অস্ত্রোপচার হলে হাড়ের মধ্যে গ্যাপ তৈরি হয়। এখন শরীরের অন্য অংশের হাড় কেটে নিয়ে সেই গ্যাপ পূরণের চেষ্টা করা হয়। এর জন্য এমন বিকল্প কিছু তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে যা শরীরে প্রবেশ করানোর পর ধীরে ধীরে শরীরেই মিশে গিয়ে ভাঙা হাড়ের মধ্যেকার ফাঁক পূর্ণ করবে। মৃত্যুর পর ইমপ্ল্যান্ট, প্লেট বের করার প্রয়োজন পড়বে না। টিস্যুর সাহায্যে এমন একটা স্তর তৈরি করা হবে যা হাড়কে জুড়ে রাখতে সাহায্য করবে এবং শরীরে মিশে যাবে৷ যাদবপুরের সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হবে নতুন করে কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় কি না। এক ধরনের সেরামিক বল, যেগুলি পুঁথির মতো দেখতে এরকম কিছু বানানোর চেষ্টা করা হবে। পুঁথিগুলির মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ঢুকিয়ে বা পুঁথির মধ্যে গুঁজে রোগীর শরীরের ক্ষতস্থানে ঢুকিয়ে সেলাই করে দেওয়া হবে। ওষুধটি শরীরে গিয়ে কাজ করবে, তারপর ধীরে ধীরে মিশে যাবে। ৪২-৬২ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধটি মিশে যাবে শরীরে। এবিষয়ে প্রাথমিকভাবে কিছুটা কথাবার্তা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এই প্রক্রিয়া শুরু হলে পরবর্তীকালে তা নজিরবিহীন হবে, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ-মহল।