প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার ফলে ফের বড়সড় বিতর্কের মুখে গুজরাতের বিজেপিশাসিত সরকার। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিলে অল্ট নিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিস্ফোরক। অভিযোগ করে। তা অনুযায়ী, ২৩ টি ওয়েবসাইট এবং সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজগুলো সমাজমাধ্যমে বিজেপির হয়ে প্রচার করছে! বিরোধী দল ও তাদের নেতাদের টার্গেট করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিটির আইপি অ্যাড্রেস ছিল এক। সংবাদ সংস্থার তদন্তে উঠে আসে, এই গোটা কান্ডের নেপথ্যে রয়েছে পদ্মশিবির। গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের নামে, নরেন্দ্র ভূপেন্দ্র বলে একটি পেজ তৈরি করা হয়েছিল। এখন সেটি আর নেই। কিন্তু মেটা অ্যাড লাইব্রেরির রিপোর্ট অনুযায়ী, পেজটি মোদী ও ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সমর্থনে প্রচার চালাত। প্রচারের জন্য জলের মতো টাকা খরচ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট চলাকালীন যা করার নিয়ম নেই। নির্বাচনে লড়াই করা প্রার্থীর খরচ করার সীমা বেঁধে দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু মেটা অ্যাড লাইব্রেরির খরচের হিসেব বলে দিচ্ছে, সেসব বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন ভূপেন্দ্র প্যাটেল।
উল্লেখ্য, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মতো সমাজমাধ্যমগুলির মালিকানা রয়েছে মেটার হাতে। তাদের অ্যাড লাইব্রেরির তথ্য ভাণ্ডারে ডিলিট হয়ে যাওয়া পেজেরও তথ্য রাখা হয়। ২০২২ সালের জুন থেকে গুজরাত নির্বাচন চলা অবধি, অর্থাৎ ২০২২-র ডিসেম্বর পর্যন্ত নরেন্দ্র ভূপেন্দ্র পেজে ৩,১৪৫টি বিজ্ঞাপন চলেছে যার জন্য ৫৫,৫৩, ৯৪০ খরচ হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন জানায়, বিধানসভা ভোটে একজন প্রার্থী প্রচারের কাজে সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারবে। (আগে প্রার্থী পিছু খরচের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২৮ লক্ষ টাকা) ২০২২ সালের ১৬ই নভেম্বর ভূপেন্দ্র প্যাটেল নমিনেশন জমা দেন, ওই দিন থেকে ভোটের দিন অবধি অর্থাৎ ৮ই ডিসেম্বর, ২০২২ অবধি নরেন্দ্র ভূপেন্দ্র ফেসবুক পেজ ও ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল থেকে পেড প্রমোশন খাতে প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, নমিনেশনের দিন থেকে নির্বাচন অবধি প্রার্থীকে সব খরচের হিসেব এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য কমিশনে জমা দিতে হয়। কিন্তু গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল নির্বাচন কমিশনকে জানান, তিনি ত্রিশ লক্ষর কিছু বেশি টাকা নির্বাচনের খরচ বাবদ তিনি রেখেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত অর্থ পনেরো হাজার টাকা এবং তাঁর দল তাঁকে ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। অন্যদিকে, নির্বাচনে খরচের বিস্তারিত বিবরণে তিনি হিসেব দিয়েছে, ভোটে তিনি ১৮,৭৪,০৪৯ টাকা খরচ করেছেন। তিনি আরও দাবি করেছেন, ভোটের প্রচারে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, সমাজমাধ্যম এবং এসএমএসের মাধ্যমে ও ইন্টারনেটে প্রচারে তিনি চার হাজার টাকা খরচ করেছেন। ফোন কলের মাধ্যমে প্রচার চলেছে বলেও জানিয়েছেন ভূপেন্দ্র। লেখাই হয়নি সমাজমাধ্যমের অ্যাড ক্যাম্পেনের কথা।
স্বাভাবিকভাবেই তথ্য-পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দিচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে থোড়াই কেয়ার করে দেদার বেনিয়ম চলেছে। কোনও ধরনের নিয়ম গ্রাহ্য করা হয়নি। কার্যত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিয়মও মানা হয়নি। নরেন্দ্র ভূপেন্দ্র পেজটি সরাসরি বিজেপির প্রচার করেছে, ভূপেন্দ্র প্যাটেলের নাম ও ছবি ব্যবহার করেই প্রচার চালিয়ে গিয়েছে। খরচ সম্পর্কিত বিধিনিষেধ মানাই হয়নি। সমাজ মাধ্যমে চলা প্রচারের খরচের কোনও তথ্যই নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়নি। নির্বাচন শুরু হওয়ার ৪৮ ঘন্টা আগেই প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার নিয়ম। (রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপেল অ্যাক্ট, ১৯৫১, ১২৬ নম্বর ধারা) এক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি। মেটা অ্যাড লাইব্রেরির তথ্য বলছে, নির্বাচনের দিনগুলোতেও প্রচার চলেছে। পেজটির সঙ্গে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। ওয়েবসাইটের নাম gujarat2022(dot)com. যার আইপি অ্যাড্রেস 43.204.185.91। এই একই আইপি অ্যাড্রেসে তিনটি ওয়েবসাইট রয়েছে। সেগুলি হল : agresargujarat(dot)com, bjpgujaratmembership(dot)com, gujarat2022(dot)com। agresargujarat(dot)com থেকে প্রচার চালানো হয়েছিল, “ભાજપ સાથે અગ્રેસર ગુજરાત” অর্থাৎ গুজরাতে বিজেপিই জিতছে। এটিই গুজরাত নির্বাচনে বিজেপির মুখ্য স্লোগান ছিল। গুজরাত বিজেপির টুইটার অধুনা এক্স হ্যান্ডেল থেকেও প্রচার চলেছিল এই ওয়েবসাইটটির। স্লোগান ও প্রচার চালানো হয়েছিল। দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজস্থানে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াতে rajasthanjanaakrosh(dot)com ওয়েবসাইটটি চালু করা হয়েছিল। রাজস্থান বিজেপি তাদের ইউটিউব চ্যানেলে ওয়েবসাইটটির প্রচারও করেছিল। bjpgujaratmembership(dot)com ওয়েবসাইটটি গুজরাত বিজেপির। সরাসরি যোগের কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ জনসমক্ষে না থাকলেও, এই ওয়েবসাইটগুলো যে বিজেপির, তা অস্বীকার করার অসম্ভব। বস্তুত, এই সব নানান মাধ্যমকে নির্বাচনের সময়ে প্রচারের কাজ ব্যবহার করেছে পদ্মশিবির। তোয়াক্কাই করা হয়নি নির্বাচন কমিশনের নিয়মকে। যার জেরে তুঙ্গে বিতর্কের ঝড়।