নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ‘আচ্ছে দিন’ এসেছে গুজরাতের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মহলে। কিন্তু গভীর অপুষ্টির আঁধারে তলিয়ে গেছে রাজ্যের অগণিত শিশু। পরিসংখ্যান এমনই বলছে।
সম্প্রতি ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সবচেয়ে ধনী ১০০ জনের যে তালিকায় সম্পদের পরিমাণের নিরিখে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে গুজরাতের বিত্তশালীরাই। এই তালিকায় প্রথম ৫ জন শিল্পপতি গুজরাতের৷ যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন মোদী বন্ধু শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি৷ তিনি টানা ৯ বছর এই প্রথম স্থানে রয়েছেন৷
রিপোর্ট অনুযায়ী, মুকেশের সম্পত্তির পরিমাণ ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা৷ গত এক বছরে তাঁর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৫৮ শতাংশ৷ এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেব দিলীপ সাংভি৷ তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছেন যথাক্রমে গৌতম আদানি, আজিম প্রেমজি ও পালনজী মিস্ত্রি৷ এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন উদয় কোটাক, পঙ্কজ প্যাটেল, অনিল আম্বানি, রাজেশ মেহতা প্রমুখ৷
রিপোর্ট বলছে, দেশের মধ্যে সম্পদশালীর সংখ্যার নিরিখে শীর্ষস্থানে যেই গুজরাত, সেখানেই বিরাট সংখ্যক শিশু অপুষ্টির শিকার৷ ২০১৬ সালের একটি আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গুজরাতের অঙ্গনওয়াড়িগুলিতে মোট ৪৩ লক্ষ শিশুর মধ্যে ১.৪৭ লক্ষ শিশুই গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে৷ দেখা গেছে, গুজরাটে গুরুতর অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের গড় ৪.৫৬ শতাংশ যা জাতীয় গড়ের ৩.৩৩ শতাংশের বেশি৷
ক্যাগ রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন শিশুর ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম৷ সেই সঙ্গে তাঁরা বলেছেন, ১.৮৭ কোটি মানুষ ICDS প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত৷ মোদী রাজ্যে যেখানে ৭৫,৪৮০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দরকার সেখানে অনুমোদিত হয়েছে মাত্র ৫২, ১৩৭টি, তার মধ্যে চলছে হাতে গোনা ৫০,২২৫টি৷
মহিলা ও শিশুবিকাশ মন্ত্রী বসুবেন ত্রিবেদী গুজরাত বিধানসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, রাজ্যের ১৪টি জেলায় অন্তত ৬.১৩ লক্ষ শিশু অপুষ্টি আক্রান্ত বা গুরুতরভাবে অপুষ্টি আক্রান্ত৷ এর মধ্যে কেবল আমেদাবাদেই ৮৫ হাজারেরও বেশি শিশু অপুষ্টি আক্রান্ত৷
এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে গুজরাতের সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি কতটা করুণ। অম্বাজি থেকে ডংস পর্যন্ত উপজাতি অঞ্চলগুলিতে ৯৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টি আক্রান্ত৷ সব পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে গুজরাত মডেলের অন্তঃসারশূন্যতার কথা। মোদী আসলে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে যে আচ্ছে দিনের কথা বলেছিলেন, তা গুজরাতে শিশুদের ভয়ঙ্কর দিনে পরিণত হয়েছে।