রাজ্যপাল-প্রসঙ্গে ফের মোদী সরকার তথা শাসকদল বিজেপিকে কড়া ভাষায় একহাত নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট জানালেন, দেশে বিজেপির আমলে রাজ্যপালেরা সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছেন। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালের রাজ্য নেই। পালের গোদা রয়েছেন!’’ সেই সূত্রেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে তাঁর দাবি, ‘‘রাজভবনগুলিকে মিউজিয়াম করে দেওয়া হোক। ব্রিটিশ আমলে রাজভবনের (রাজ্যপালের) প্রয়োজন ছিল। এখন আর কোনও প্রয়োজন নেই।’’ বিজেপি অবশ্য রাজ্যপাল পদ তুলে দেওয়ার দাবিকে ‘অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবিরোধী’ বলে উল্লেখ করেছে। রাজ্যের প্রশাসন নিয়ে ধারাবাহিক বিরোধের মতোই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আক্রমণকে ক্রমশ ধারালো করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালেদের দিয়ে সমান্তরাল সরকার চালানো হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার থাকতে রাজ্যপালের কী প্রয়োজন?’’ মুখ্যমন্ত্রীর সাফ দাবি, ‘‘যদি শপথ গ্রহণ করানোর জন্য প্রয়োজন হয়, তা হলে তা প্রধান বিচারপতি করতে পারেন।’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজভবনের বিরোধের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগ নিয়েও সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের ভূমিকাকে ‘বিজেপির দালালি’ বলেও চিহ্নিত করেছেন। এ দিন তিনি সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদলই কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যপালের। সেই সব জায়গায় বিজেপি-আরএসএসের লোকেদের বসানো হচ্ছে। এটা তাঁর কাজ?’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ অবশ্য নস্যাৎ করেছে বিজেপি। রাজ্য দলের প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘তৃণমূলের মধ্যে এখনও কংগ্রেসের ডিএনএ রয়ে গিয়েছে। তাই তৃণমূল নেত্রী শয়নে, স্বপনে কংগ্রেসের কর্মপদ্ধতি দেখতে পান। তবে এ কথাটা ঠিক যে এই রাজ্যে সরকারটা টিকে আছে রাজ্যপাল এবং সংবিধানের রক্ষাকর্তাদের বদান্যতায়।’’ পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা ও লুটের অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ( ইউসিসি) চালু করতে চাইছে। আমরা যেমন এনআরসি আটকেছি, যেমন সিএএ আটকেছি তেমনই এটাও হতে দেব না।’’ তিনি বলেন, ‘‘ওরা জানে, হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টধর্মের মানুষের মধ্যে কত ভাগ (সাব কাস্ট) আছে। কারও সঙ্গে কিছু আলোচনা করে না।’’ রাজ্যের পাওনা টাকা নিয়েও এদিন কেন্দ্রকে নিশানা করেন। ‘‘বাংলাকে বঞ্চনা করছেন, শোষণ করছেন। দলের নেতাদের তোষণ করতে টাকা আটকে দিচ্ছেন। আমাদের প্রাপ্য ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা আটকে রাখা হয়েছে’’, বক্তব্য তৃণমূল সুপ্রিমোর।