পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবির পরও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব পিছু ছাড়ছে না বঙ্গ গেরুয়াশিবিরের। বর্তমানে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার রাজ্য সফরের মধ্যেই পুরুলিয়া জেলা বিজেপিতে দেখা দিল গৃহযুদ্ধ। জেপি নাড্ডাকে দেওয়া পুরুলিয়ার পাঁচ পদ্ম-বিধায়কের একটি চিঠি শনিবার সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই চরম অস্বস্তিতে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। ওই চিঠিতে বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গাকে বদলের দাবি জানানো হয়েছে নানা কারণ দিয়ে। আর তাঁকে ঘিরেই পুরুলিয়া জেলা বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এল। তবে যে পাঁচ বিধায়ক ওই চিঠিতে সই করেছেন, তারা অবশ্য জানিয়েছেন ওই চিঠি ২০২১ সালের। প্রসঙ্গত, বছর দুয়েক আগেও বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গাকে সরানোর জন্য দাবি ওঠে দলের অন্দরে। সেই সময় পাঁচ গেরুয়া বিধায়কই দলের সর্বভারতীয় সভাপতির কাছে চিঠি দেন। তাহলে কি সেই পুরনো চিঠিই ভাইরাল হল? তা যাই হোক না কেন, বিজেপির জেলা সভাপতির বদলের দাবি ঘিরে অন্তর্কলহ আরও একবার প্রকাশ্যে এল জঙ্গলমহলের এই জেলায়। তবে বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, “সাংগঠনিকভাবে এই বিষয়ে আমি কোনও তথ্য পাইনি। এটা তৃণমূলের পরিকল্পনা। আমাদের জেলা সংগঠনে কোথাও কোনও গোষ্ঠী-কলহ বা সমস্যা নেই। এইসব গোষ্ঠী চলে তৃণমূলে। সেই কারণেই দলীয় নির্দেশ অমান্য করে পুরুলিয়ায় তাদের একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান হয়ে যাচ্ছে।” বছর দুয়েক আগে বিবেক রাঙ্গা পুরুলিয়া জেলা বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব পান। তারপর থেকেই দলের মধ্যেই দাবি ওঠে তাঁকে সরানোর জন্য। সেই সময় জেলার একাধিক বিধায়ক দলের কেন্দ্রীয় স্তরে সরানোর এই দাবি রাখেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
অথচ, জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা পুরুলিয়ার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁকে ওই চেয়ার থেকে সরানো যায়নি। এদিকে রবিবার জে পি নাড্ডার সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির বৈঠক। ওই বৈঠকে থাকবেন এই জেলার বিধায়করাও। তবে কাশীপুরের বিজেপি বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদা বলেন, “ওই চিঠি ২০২১ সালের। রবিবার আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেই কারণে আমি কলকাতা যাচ্ছি।” ওই চিঠিতে বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদা ছাড়াও পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের সই রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনও সাড়া দেননি। এছাড়া ওই চিঠিতে সই রয়েছে জয়পুরের বিধায়ক নরহরি মাহাতো, বলরামপুরের বিধায়ক বানেশ্বর মাহাতো ও পাড়ার বিধায়ক নদীয়ার চাঁদ বাউরির। তবে এই বিধায়কদের ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, ওই চিঠি এখনকার নয়, কোনওভাবে সেটি ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক জেলায় বিজেপির জেলা সভাপতির বদল ঘটে। কিন্তু এই জেলায় কোন বদল হয়নি। ‘গেরুয়া দুর্গ’ বলে পরিচিত এই জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে শোচনীয় ফল হয় বিজেপির। যদিও পুরুলিয়া জেলা বিজেপি নেতৃত্ব এই হার মানতে নারাজ। গণনার কারচুপিতেই এমন ফল সামনে এসেছে বলে তাদের অভিযোগ। সেই কারণে কলকাতা হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়েছিলেন দলের জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা। কিন্তু হেরে যান তিনিও। সবে মিলিয়ে দলের অন্দরে জেলা সভাপতি বদল নিয়ে প্রবল জল্পনা চলছে। তার মধ্যেই এহেন অন্তর্দ্বন্দ্ব স্বাভাবিকভাবেই মাথাব্যথা বাড়াল পদ্ম-নেতৃত্বের।