যোগী আদিত্যনাথের আমলে আকচারই উত্তরপ্রদেশে এনকাউন্টারে বা পুলিশি সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। এ নিয়ে বারবারই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ যোগীর পুলিশকে। জানা গিয়েছে, গত ৫ বছরে যোগী রাজ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৮৩ জন। অথচ দেশের কোনও মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা, এমনকী জম্মু-কাশ্মীরের মতো অশান্ত অঞ্চল তো নয়ই, বিশেষ কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই পুলিশের গুলিতে এত মানুষের মৃত্যুর নজির সাম্প্রতিককালে নেই।
একটি মামলায় পুলিশের হাতে এত মানুষের মৃত্যুতে বিস্ময় প্রকাশ করে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট উত্তর প্রদেশ সরকারের কাছে ১৮৩টি সংঘর্ষে নিহতের ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে। শীর্ষ আদালত বলেছে, নিহতদের বিরুদ্ধে কী কী ধরনের অপরাধ ছিল, আদালতে বিচার সম্পন্ন হলে সেই অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা কী হতে পারত, সংঘর্ষে মারা যাওয়ার আগে অপরাধীকে ধরতে পুলিশ কী ধরনের পদক্ষেপ করেছিল, তদন্ত কোন পর্যায়ে ছিল, ১৮৩টি ঘটনার প্রতিটি সম্পর্কে এই সব তথ্য উত্তর প্রদেশ সরকারকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। বিচারপতি এসআর ভাট বলেন, প্রয়োজনে আদালত একটি কমিশন গঠন করে সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ এপ্রিল লখনউয়ে কুখ্যাত গাংস্টার আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফ আহমেদকে একটি হাসপাতালে চত্ত্বরে খুন করে অজ্ঞাত পরিচিত দুষ্কৃতীরা। দুই গ্যাংস্টার ভাই তখন পুলিশের হেফাজতে ছিল। জেল থেকে তাঁদের হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আতিকের নিকটজনেরা ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও রাজ্য সরকারকে পার্টি করে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামীদের কী করে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা খুন করতে পারল? পুলিশ কী করছিল? উল্লেখ্য, ওই ঘটনার আগের দিনই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে খুন হয় আতিকের বড় ছেলে।
এই মামলায় আতিকের আইনজীবারা পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মৃত্যুর ঘটনাগুলি তুলে ধরে অভিযোগ করেন উত্তরপ্রদেশে পুলিশই বিচার ব্যবস্থার শেষ কথা হয়ে উঠেছে। বিচারালয়ে বিচারের পরিবর্তে পুলিশই অপরাধীদের চিরদিনের জন্য সরিয়ে দিচ্ছে। বিচারপতি ভাট এরপর নিজেই প্রশ্ন তোলেন, অপরাধীকে সাজা দেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া বিশদে ফৌজদারি আইনে বলা আছে, পুলিশ হেফাজতে আসামীকে কীভাবে সুরক্ষা দিতে হবে সে ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট এবং একাধিক হাই কোর্টের নির্দেশিকা রয়েছে। তারপরও কীভাবে পুলিশের হেফাজতে থাকা আসামী খুন হয়ে যায়? পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেই বা ১৮৩জন লোক খুন হয় কীভাবে?