আজ, বৃহস্পতিবারই সংসদে নতুন বিল পেশ করেছে মোদী সরকারের আইন মন্ত্রক। শীর্ষ আদালতের সংবিধান বেঞ্চের রায় খারিজ করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে কেন্দ্রের হাতেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রাখতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মোদীর সরকারের এহেন পদক্ষেপে যারপরনাই অসন্তুষ্ট বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের অভিযোগ, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ঠিক করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। এব্যাপারে তৃণমূলনেত্রী যদিও এখনও প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে সূত্রের দাবি, তৃণমূল সংসদের দুই কক্ষে এই বিলের জোরদার বিরোধিতা করবে। শুধু তৃণমূল বিরোধিতা করবে তাই নয়, এ ব্যাপারে ২৬টি দলের সমষ্টিগত ‘ইন্ডিয়া’ জোট এবং নবীন পট্টনায়েক, জগন্মোহন রেড্ডি, কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী তথা তাঁদের দল যাতে আপত্তি জানায়, তার প্রস্তুতি শুরু হতে চলেছে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় নির্বাচন কমিশনের উপর সরকারের প্রভাব বিস্তার নিয়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে। কমিশন আদৌ নিরপেক্ষ কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। এহেন প্রেক্ষাপটে গত মার্চ মাসে মাইলফলক রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নিয়োগে আর কেন্দ্রীয় সরকার শেষ কথা বলবে না। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই পদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের বেছে নেবে। কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়োগের নির্দেশ জারি করবেন রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের ওই রায়কে সেদিন স্বাগত জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে তিনি বলেছিলেন, “সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়ে গণতন্ত্রের জয় হল”। মমতা এও বলেছিলেন, অত্যাচারী শক্তির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বিরাজ করছে জনগণের ইচ্ছাই।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদে যে বিল পেশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও বাকি দুই নির্বাচন কমিশনার পদে কাদের নিয়োগ করা হবে সে ব্যাপারে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। সেই সার্চ কমিটিতে থাকবেন ক্যাবিনেট সচিব এবং আরও সচিব পদের অফিসার। তাঁরা যে সব নাম বেছে বের করবেন তা সিলেকশন কমিটির কাছে যাবে। সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী ওই সিলেকশন কমিটিতে তিন জন সদস্য থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী হবেন কমিটির চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে থাকবেন বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত আর এক জন মন্ত্রী। এবিষয় সন্দেহ নেই যে, তিন জনের কমিটিতে ২ জনের মতই গরিষ্ঠ বলে বিবেচিত হবে। বস্তুত এই কারণেই তৃণমূল ও কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলি বলছে যে এবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন মোদী ও অমিত শাহ। এর আগে গত মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এম জোসেফের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল যে যদি লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ শূন্য থাকে তাহলে একক বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন। বর্তমানে লোকসভায় প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি নেই কোনও দলের। বিরোধী দলগুলির মধ্যে শীর্ষে আছে কংগ্রেস। সুপ্রিম কোর্টের রায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার কার্যকর করলে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার যে নতুন বিল এনেছে তাতে সেই বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা নেই। সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়কে বড় পদক্ষেপ বলে অনেকেই কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আশা প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়াতেও সেই ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছিল। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ আন্দোলনের কথা সুপরিচিত। ভুয়ো ভোটার আটকাতে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে দীর্ঘ দিন লড়াই করেছেন মমতা। ১৯৯৩-এর ২১ জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতার মহাকরণ অভিযানের প্রধান দাবি ছিল সচিত্র পরিচয় পত্র। সেই অভিযানে পুলিশে গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী নিহত হন। এখন সরকারের বিলের বিরোধিতায় তৃণমূল কী কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।