উত্তর বাংলায় নয়া পদক্ষেপের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। উল্লেখ্য, পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণ হল দার্জিলিংয়ের রোপওয়ে। যা বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এবার ফের পুরোনো রুটে তা চালাতে চায় রাজ্য। খোদ মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহী ওই রোপওয়েকে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ফের চালু করতে। সেই সঙ্গে নজর দেওয়া হবে যাত্রীদের নিরাপত্তার দিকেও। দার্জিলিংয়ে যারা বেড়াতে যান, তাঁদের অনেকেই পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে রোপওয়েতে ওঠেন। সেখান থেকে খুব সুন্দর ভাবে চোখে ফুটে ওঠে শৈলশহরের মাধুর্য। শুধু বাইরের পর্যটকরাই নয়, যাতায়াতের জন্যও দার্জিলিংয়ের বাসিন্দারা এক সময় রোপওয়ে ব্যবহার করতেন। ২০০৩ সালে দার্জিলিংয়ে রোপওয়ে ছিঁড়ে ৪ পর্যটকের মৃত্যু হলে প্রায় আটবছর সেই সার্ভিস বন্ধ ছিল। ২০১২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি নতুন করে এই পরিষেবা চালু হয়। তাতে পুরোনো রুট কিছুটা কাটছাঁট করা হয়। আপাতত যে রুটে রোপওয়ে চলছে তার দূরত্ব মাত্র ২.৩ কিলোমিটার। বিগত ১৯৬৮ সালে রাজ্য বনদফতরের উদ্যোগে দার্জিলিংয়ের চকবাজার থেকে সিংলাবাজারের মধ্যে প্রথম এই রোপওয়ে সার্ভিস চালু হয়। পরবর্তীকালে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসের হাতে। শুরুর দিকে এই রোপওয়ে চলতো সিঙ্গল ট্র্যাক জিগ ব্যাক সিস্টেমে। ১৯৯৫-‘৯৬ সালে পুরোনো সিস্টেম বদলে মোনোম্যাবেল গন্ডোলা সিস্টেম চালু হয়। এই রোপওয়ে পথের একদম তলার দিকে রয়েছে রাম্মাম নদী ও রাম্মাম উপত্যকা।
সম্প্রতি রাজ্যের বনদফতরের আধিকারিকরা দাবি করেছেন, দার্জিলিংকে আরও পর্যটকবান্ধব করে তুলতে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরোনো রুটে আবার নতুন করে রোপওয়ে সার্ভিস চালু করা হবে। তার জন্য কোনও বেসরকারি এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। যে পুরোনো রোপওয়ে রুট ছিল, সেটিকে আমূল সংষ্কার করা হবে। তৈরি হবে নিউ টার্মিনাল। মধ্যবর্তী স্টেশনের সংখ্যাও বাড়বে। যাত্রীদের জিনিসপত্র রাখার জন্য বানানো হবে ক্লক রুম। পর্যটকদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা থাকবে। তবে এবার দার্জিলিংয়ের রোপওয়ে নতুন ভাবে চালু রাখার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে রোপওয়ের আধুনিকীকরণের পাশাপাশি যাত্রী নিরাপত্তার ওপর। তার জন্য সিইএন স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলা হবে। দার্জিলিং যেহেতু ভূকম্পপ্রবণ এলাকা তাই যথাযথ সমস্ত সুরক্ষা বিধি মেনে রোপওয়ের পিলারগুলি বানানো হবে। রোপওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝপথে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে তাড়াতাড়ি যাত্রীদের নামিয়ে আনা যায় তার জন্য বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। তার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীদেরও নিয়োগ করা হবে। থাকবে পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম। বিপদ সঙ্কেত পাঠানোর জন্য অ্যালার্ম সিস্টেমও থাকবে। পুরো যাত্রাপথকে মুড়ে দেওয়া হবে সিসিটিভি দিয়ে। দুর্ঘটনার কারণে কেউ হতাহত হলে তাঁদের জন্য থাকবে বীমার বন্দোবস্তও।