আজ ৯ই আগস্ট। বিশ্ব আদিবাসী দিবস।।বুধবার ঝাড়গ্রামে এই বিশেষ দিনটির উদযাপন অনুষ্ঠানে মণিপুর-প্রসঙ্গে বিজেপিকে কড়া ভাষায় একহাত নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মণিপুর নিয়ে আজ কেন্দ্রকে তুলোধনা করেছেন রাহুল গাান্ধী। তারপর এ নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল নেত্রীও। আজ ঝাড়গ্রামে তিনি বলেন, “আমি কুড়মি ভাইবোনদের বলব, আপনারা আপনাদের ভাষার উন্নতি করুন। আপনাদের সংস্কৃতির উন্নতি করুন। বিজেপি চাইছে মণিপুরের মতো তপসিলি উপজাতি ও কুড়মিদের জাতিদাঙ্গা লাগাতে। আপনারা কখনও একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া করবেন না। আপনি আপনার মতো থাকুন। আদিবাসীরা আদিবাসীদের মতো থাকবে। সবাই যেন ভালো থাকে সেটা আমাদের লক্ষ্য। আগুন লাগানো খুব সহজ। একটা দেশলাই জ্বালালেই হয়ে যায়। আগুন নেভানো খুব কঠিন। আগুন একবার জ্বলে গেলে তা আর নেভে না। আপনারা তো খুনের রাজনীতি করছেন, রক্তের রাজনীতি করছেন। আমি এসব করতে চাই না। আমি কুড়মি ভাইবোনদের বলব আপনাও আপনাদের ভাষার উন্নতি করুন। আপনাদের আবেদন আমি কেন্দ্র পাঠিয়েছি। এখন তা আমার হাতে নেই। উন্নয়নের জন্য যা বলবেন তা আমি করে দেব। দয়া করে একসঙ্গে থাকবেন।”
পাশাপাশি, মমতা আরও বলেন, “কেন্দ্রের সরকারকে আমরা বলছি, দিল্লীর গদি ছাড়ো। বিজেপি, তুমি দিল্লীর গদি ছাড়ো। বিজেপি ইউ ক্যুইট ইন্ডিয়া। দিল্লীর গদিতে থাকার তোমার কোনও অধিকার নেই। মণিপুর জ্বলছে, কেন্দ্রের কোনও হেলদোল নেই। ওরা ভাবছে দেশটাকে টুকরো টুকরো করে দেব। ওদের শুধু ভোটের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী যতটা বকেন, তার এক অংশও করে দেখান না। এখন ভোট আসছে। আবার বলবেন। হরিয়ানা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ ফিরে আসছেন। আমাদের বাংলার মানুষ যারা আসছেন তাদের বিষয়টা আমরা দেখে নেব। আগে বছরে তিনশো চারশো লোক খুন হতো এখানে। কত মৃত্যুর মিছিল দেখেছি। এখন আর সে সব হয় না এখানে। আমরা সব বন্ধ করেছি। আমাকে যদি বলে মমতা ব্যানার্জি ইউ ক্যুইট ইন্ডিয়া, তাহলে আমি বলবো আমি যাবো না। আমি এই দেশের মানুষ। ওরা আজকে গান্ধীজীকে ভুলে গেছে, নেতাজীকে ভুলে গেছে। হঠাৎ করে বলছে এখন ইউনিফায়েড সিভিল কোড করো। কেন করবে? গায়ের উপর চাপিয়ে দিলেই হবে না। তাই আজ বলে যাচ্ছি ইউনিফায়েড সিভিল কোড মানি না, মানছি না। মনিপুরের লোকেরা তো দেশের লোক। কেন তাদের উপর এমন অত্যাচার করছো ? যদি রিলিফ দিতে হয় (মণিপুরে), তাহলে আমাদের অ্যালাউ করো, তোমরা যদি না করতে পারো আমরা জল, খাদ্য, ওষুধ সব পাঠিয়ে দেব। মেজরিটির দ্বায়িত্ব মাইনরিটি কে রক্ষা করা, মাইনরিটির উপর অত্যাচার করা নয়।” বিজেপির কথায় প্ররোচিত না হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া বাংলার আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের ব্যাপারেও জানান মমতা। “২০১১ সালে আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিলো ১৬০ কোটি। আমরা সেই টাকা বাড়িয়ে ১১৩৯ কোটি টাকা করেছি। ২০১৭ সালে ঝাড়গ্রামকে নতুন জেলা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ১ কোটি ৯২ লক্ষ ‘লক্ষীর ভান্ডার’, ৯ কোটি ‘স্বাস্থ্য সাথী’, ১৫ লক্ষ ‘রূপশ্রী’, ১ কোটি ৫৬ লক্ষ ‘সমব্যাথী’ দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ ভাষা নিয়ে উল্টোপাল্টা আলোচনা করছে। আমরা সেটা বলিনি। যারা বাংলা মাধ্যমে পড়ে তারা বাংলা ছাড়া অন্য যে কোনো ভাষা নিতে পারে। যারা সাঁওতালি ভাষার স্কুলে পড়ে তারা প্রথম সাবজেক্ট হিসাবে সাঁওতালি নেবে। বাকি দুটো ভাষা তারা অপশনাল হিসাবে নেবে। যারা দার্জিলিং এর ছাত্র ছাত্রী তারা নেপালি ভাষাটা প্রথম ভাষা হিসেবে নেবে বাকি দুটো ভাষা তারা অপশনাল হিসাবে নেবে। অনেকে বলছে আমরা বাংলা চাপিয়ে দিচ্ছি। না, তেমনটা নয়। মনে রাখবেন ‘থ্রি ল্যাঙ্গোয়েজ ফর্মূলা’। যাদের যেটা মাতৃভাষা তারা প্রথম ভাষা হিসাবে সেটাই রাখবে। বাকি দুটো ভাষা তারা অপশনাল হিসাবে নেবে। আমাদের সরকার মানুষের কাছে এই বিশ্বাস রাখতে চায় আমরা সব ভাষাকেই প্রমোট করব। সাঁওতালি ভাষার জন্য ডেডিকেটেড ব্রাঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে। ঝাড়গ্রামে সাঁওতালি ভাষার জন্য একটা করে সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল করা হবে প্রতি ব্লকে ব্লকে”, বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।