হল এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা! একটি অনলাইন জব পোর্টাল থেকে কাজ খুঁজে আহমেদাবাদে পাড়ি দিয়েছিলেন সন্দেশখালির তরুণ তপোব্রত মণ্ডল। আর সেখানে গিয়ে অপহরণের শিকার হলেন তিনি! ১২ দিন ধরে আটকে থাকার পর পুলিশ ও জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় বাড়ি ফিরলেন বছর কুড়ির ওই তরুণ ইঞ্জিনিয়ার। বসিরহাটের সন্দেশখালি থানার কোড়াকাটি গ্রামের বাসিন্দা তপোব্রত আইটিআই থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। বেশ কয়েকদিন ধরেই তিনি চাকরি খুঁজছিলেন। অনলাইনে জব পোর্টালে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজের বিজ্ঞাপন দেখে তিনি সেখানে আবেদন করেন। আবেদনের ঠিক পাঁচদিন পরেই একটি নামী মোটর সংস্থার কোম্পানিতে কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয় তপোব্রতকে। অনলাইন ইন্টারভিউ দেওয়ার পর সেখান থেকে বলা হয়, কারখানাটি আহমেদাবাদে অবস্থিত। তাই রাজি থাকলে তাঁকে গুজরাতে যেতে হবে। সঙ্গে বেশ কয়েক হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি চাওয়া হয়। সেই প্রস্তাবে তপোব্রত রাজি হয়ে যান। রেজিস্ট্রেশন ফি-র টাকাও পাঠিয়ে দেন তিনি। এরপরেই ১৮ই জুলাই সন্দেশখালির বাড়ি থেকে রওনা দেন গুজরাতের আহমেদাবাদের উদ্দেশে। গত ২০শে জুলাই তপোব্রত আহমেদাবাদে পা রাখেন। এরপরেই বাড়ি সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাড়ি থেকে বার বার তপোব্রতর মোবাইলে ফোন করতে থাকলেও শোনা যায়, ‘সুইচড অফ’। ছেলের খোঁজ না পেয়ে বাবা-মা রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
এরপর বেসরকারি ওই কোম্পানির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টাও করেও কোনও লাভ হয়নি। পরে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য প্রণব রায়ের কাছে সমস্ত বিষয়টি খুলে বলেন তরুণের পরিবার। প্রণব রায় ও কয়েকজন স্থানীয় তপোব্রতর খোঁজে আহমেদাবাদে গিয়ে গুজরাত পুলিশের দ্বারস্থ হন। তাঁদের অভিযোগ, সেখানের পুলিশ তাঁদের প্রথমে কোনও সহযোগিতা করেনি। কোনও অভিযোগ নিতেও অস্বীকার করে। ফলে তাঁদের সন্দেশখালিতে খালি হাতেই ফিরতে হয়। এরপরেই সন্দেশখালি থানায় ছেলে নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন ওই দরিদ্র পরিবার। অভিযোগ পেয়ে সন্দেশখালি থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত সদস্য প্রণব রায়ের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের ও প্রান্ত থেকে তপোব্রত কাতর গলায় তাঁকে উদ্ধার করার জন্য সাহায্য চাইতে থাকে। এই খবর পাওয়া মাত্র সন্দেশখালি থানাকে জানানো হয়। পরে ভবাণী ভবনে সিআইডির সঙ্গে কথা বলে পুলিশের একটি বিশেষ টিম আহমেদাবাদের বানসারায় গিয়ে একটি চালের মিল থেকে ওই তরুণকে উদ্ধার করে। অপহৃত ওই তরুণ জানিয়েছেন, আহমেদাবাদে নামার পরে সেখানে তিনি রাস্তার ধারে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন। সেই সময় কয়েকজন যুবক অটো করে সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তারপর ওই তরুণের গলায় ছুরি ধরে অটোতে তুলে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। মোবাইল-সহ সমস্ত জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাই বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগের কোনও সুযোগই পাননি ওই তরুণ। শুধু অপহরণকারীদের ফাঁদ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে গিয়েছেন। পরে কোনওরকমে একটি মোবাইল সংগ্রহ করেই তিনি সন্দেশখালির জনপ্রতিনিধি প্রণব রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। অবশেষে ১২ দিন পর বাড়ি ফিরলেন তিনি। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।