বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ভারতীয় রেলের। একাধিকবার নানান ইস্যুতে উঠছে নানান প্রশ্ন। মাসদুয়েক আগেই ঘটে যাওয়া করমণ্ডল এক্সপ্রেস-দুর্ঘটনার বিভীষিকার রেশ এখনও কাটেনি। তার পরেও বিভিন্ন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি, এক্সপ্রেস হোক কিংবা প্যাসেঞ্জার বা লোকাল ট্রেন, নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে না পৌছানো নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের প্রতি যাত্রীদের অভিযোগ নতুন কোনও ঘটনা নয়। ট্রেন দেরিতে চলার অভিযোগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন রেলযাত্রীরা। ঠিক কী কারণে দেরিতে চলে ভারতীয় রেল? এবার এই বিষয়েই তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য সামনে নিয়ে এল পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন। রেল আধিকারিকদের দাবি, “ট্রেনগুলির সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখার জন্য রেলকর্মীরা সবসময় কঠোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, তারই মধ্যে ‘অ্যালার্ম চেইন পুলিং বা অ্যালার্ম চেন টানা’র (এসিপি) ঘটনা বাড়ছে। যার ফলে চলার পথে বার বার হোঁচট খাচ্ছে ভারতীয় রেলের গতি। এটিই ট্রেন দেরিতে (ডিলেইড অপারেশন) চলার অন্যতম প্রধান কারণ।” রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রথম ৬ মাসে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনে এই চেইন টানার ঘটনায় মোট ৪৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জরিমানা বাবদ তাদের কাছ থেকে ২.৬২ লক্ষ টাকা আদায় করেছে ভারতীয় রেল। অ্যালার্ম চেইন টানার জন্য ৪৭৬ টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এই ৬ মাসে।
উল্লেখ্য, এই চেইন টানার ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রভাবিত হয়েছে যে ট্রেনগুলি, সেগুলি হল, ১২৩৫২ ডাউন রাজেন্দ্রনগর – হাওড়া এক্সপ্রেস, ১৮১৮৩ আপ টাটানগর – দানাপুর এক্সপ্রেস, ১৫০২৭ আপ মৌর্য এক্সপ্রেস, ১৮১৮৪ ডাউন দানাপুর – টাটানগর এক্সপ্রেস, ১৩২৮৮ ডাউন দক্ষিণ বিহার এক্সপ্রেস ও ১২৩০৪ ডাউন পূর্বা এক্সপ্রেস। আরও জানা গিয়েছে, পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের বেশিরভাগ অ্যালার্ম চেইন পুল বা টানার জন্য প্রভাবিত হওয়া স্টেশন ও সেকশানের সংখ্যা একাধিক। স্টেশনগুলো হল, এরাজ্যের আসানসোল, দুর্গাপুর এবং প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের জসিডি, জামতারা ও মধুপুর। সেকশনের মধ্যে রয়েছে কাসিটাঁড়-বিদ্যাসাগর, সালানপুর-সীতারামপুর, বোদমা-জামতারা, তুলসীটাঁড়-লাহাবন ও আসানসোল-নিমচা। রেল সূত্রের খবর অনুযায়ী, যদি এসিপি বা অ্যালার্ম চেইন টানার ঘটনা স্টেশনে হয়ে থাকেন, তবে সেখানে কর্তব্যরত আরপিএফের কর্মীদের ওই ট্রেনের কোচে যেতে হবে। এসিপি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করতে হবে। কিছু প্রিমিয়াম ট্রেনে অন ডিউটি মেকানিক্যাল (ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন) কর্মীদেরকে অ্যালার্ম চেইন টানার পরে সেই কোচে যেতে হয় ও ডিভাইস রিসেট করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রেনের গার্ড ও ড্রাইভারকে এসিপির ঘটনা ঘটার পরে সেখানে উপস্থিত থাকতে হয়। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ট্রেন আটকে রাখা হয়। যে কারণে সংশ্লিষ্ট সেকশানে ওই সময়ে পরবর্তী ট্রেনগুলির সময় নষ্ট হয়। রেলের তরফে এও বলা হচ্ছে যে, বৈধ কারণ ছাড়াই চেইন টানা ভারতীয় রেলওয়ে আইনের ১৪১ নং ধারার অধীনে একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। অনেক ক্ষেত্রে দুটি সাজাই হতে পারে দোষী সাব্যস্ত হওয়া যাত্রীর। রেলের এক কর্তা বলেন, অ্যালার্ম চেইন টানার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় রেল স্টেশন চত্বরে ও ট্রেনে পোস্টার সাঁটিয়ে সচেতনতার প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া অ্যালার্ম চেইন পুলিংয়ের বিপদ সম্পর্কে অবগত করতে যাত্রীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণও শুরু করা হয়েছে। তবে তাতেও চেইন টানার প্রবণতা অব্যাহত। ফলত সুরাহা দূর অস্ত।