রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বারবার একটি অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে সিপিআইএম। তৃণমূল জমানায়, বাম আমলের তুলনায় নাকি কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ! দেনার দায়ে নাকি আকণ্ঠ ডুবে গিয়েছে বাংলার তৃণমূল সরকার! সমাজমাধ্যমে এই ধরনের প্রচার প্রায় রোজের ঘটনা। এমনকী বিজেপি নেতা তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের দেনার পরিমাণ নাকি বেড়ে ৭ লক্ষ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। এবার তা নস্যাৎ করে সঠিক তথ্য দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করলেন, রাজ্যের ৭ লক্ষ কোটি ঋণ হয়ে গিয়েছে, এই তথ্য ঠিক নয়। “আমাদের বাম আমলের ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনও রাজ্য পুরনো ঋণ নিয়ে থাকলে, সেই ঋণের সুদ বাড়তে থাকে। যার ফলে পুরনো রাজ্যগুলির ঋণের পরিমাণ এমনিই বেশি হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ বা তেলেঙ্গানার মতো নতুন করে তৈরি হওয়া রাজ্যের এই ঋণের পরিমাণ অনেক কম হয়। কারণ এই রাজ্যগুলিকে পুরনো ঋণ বইতে হয় না”, জানান তিনি।
পাশাপাশি, ঋণের পরিমাণ নিয়ে মুখ্যসচিবের ব্যাখ্যা, কোনও রাজ্য কতটা দেনায় ডুবেছে সেটা ঋণের পরিমাণ দেখে নির্ধারণ করা যায় না। সেটা নির্ধারণ করতে হয় রাজ্যের মোট জিডিপি এবং ঋণের অনুপাতের উপর। মুখ্যসচিব জানান, ২০১১ সালে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু সেসময় রাজ্যের ঋণের সঙ্গে জিডিপির অনুপাত ছিল ৪০ শতাংশ। সেখানে বর্তমানে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৫.৮৬ লক্ষ কোটি টাকা হলেও সে তুলনায় জিডিপির পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। যার ফলে ঋণ এবং জিডিপির অনুপাত কমে হয়েছে ৩৩ শতাংশ। করোনার মতো মহামারির পরও এই অনুপাত কমানো অভাবনীয়। মুখ্যসচিবের দাবি, বাংলার সরকারের ভাল ঋণ ব্যবস্থাপনার সুবাদেই ঋণের অনুপাত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। খেলা-মেলার পিছনে খরচ করতে গিয়ে পরিকাঠামো খাতে উন্নয়ন করতে পারছে না সরকার। বিরোধীদের এই অভিযোগও এদিন খণ্ডন করেছেন মুখ্যসচিব। তিনি জানিয়েছেন, ২০১১ সালে যেখানে বাংলায় পরিকাঠামো খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সেখানে বর্তমানে পরিকাঠামো খাতে বরাদ্দ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫ গুণ বেড়েছে তা। দেনার পরিমাণ নিয়ে এদিন মোদী সরকারকেও পালটা একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে রাজ্যের যত বেশি জিডিপি, সে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ বেশি হয়। হাই জিডিপির রাজ্যে ঋণও বেশি হয়। এই মুহূর্তে কেন্দ্রের ঋণের পরিমাণ ১৫০ লক্ষ কোটি টাকা। “কেন্দ্রও তো প্রচুর ঋণ নিয়েছে। সেটা তো বলা হয় না। রাজ্যের কত ঋণ বলা হলেও কেন্দ্রের ঋণের কথা বলা হয় না কেন?”, প্রশ্ন তৃণমূল সুপ্রিমোর।