ভাল কাজের সুবাদে রাজ্য সরকারের তরফে বাংলার ছয় আইপিএসকে ভূষিত করা হবে চিফ মিনিস্টার’স পুলিশ মেডেলে। এঁদের মধ্যে জঙ্গলমহলে কর্মরত দুই পুলিশ সুপার রয়েছেন। আছেন উত্তরবঙ্গের এক এসপিও। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলে কর্মরত এক সিনিয়র আইপিএসও রয়েছেন। রাজ্যের তরফে ‘চিফ মিনিস্টার’স পুলিশ মেডেল ফর আউটস্ট্যান্ডিং সার্ভিস’ সম্মান পাচ্ছেন ত্রিপুরারী অথর্ব। তিনি এডিজি ও আইজি পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছেন। টানা ২৫ বছর ধরে অভিজ্ঞতায় ভালো কাজের কারণেই তাঁকে এই পুরস্কার দিচ্ছে রাজ্য। এছাড়া ‘চিফ মিনিস্টার’স পুলিশ মেডেল ফর কমেন্ডেবল সার্ভিস’-র সম্মান পাচ্ছেন মোট পাঁচ জন এসপি। তার মধ্যে রয়েছেন এসপি আলিপুরদুয়ার ওয়াই. রঘুভামশি, হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার স্বাতী ভাঙ্গালিয়া, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুরের এসপি ধৃতিমান সরকার, হুগলি গ্রামীনের পুলিশ সুপার আমনদীপ। আগামী ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের রাজ্যের অনুষ্ঠানে এই দুটি পুরস্কার তুলে দেবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “এই সম্মান আরও ভালো কাজের জন্য উৎসাহ ও অনুপ্রাণিত করবে”, জানান এই সম্মান পাওয়া জঙ্গলমহলের দুই পুলিশকর্তা পুরুলিয়ার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মেদিনীপুরের ধৃতিমান সরকার। জঙ্গলমহলের এই দুই পুলিশ সুপারের কাজ রাজ্য পুলিশে যথেষ্ট-ই প্রশংসনীয়। মাওবাদী থিঙ্ক ট্যাংক বিক্রম গ্রেফতার থেকে বারাসতের মনুয়া কাণ্ডের কিনারা, মালদহের কালিয়াচকের অপরাধ দমন থেকে অস্থির বসিরহাটকে সামলানো, ডায়মন্ড হারবারে মানুষজনদের নিরাপত্তায় ‘আস্থা’ অ্যাপ চালু থেকে পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রায় রেলের সিন্ডিকেটের মাথাকে গ্রেফতার। প্রায় দেড় দশক ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভালো কাজের সুবাদে এই সম্মান পাচ্ছেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ।
উল্লেখ্য, এই সম্মান যারা পাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে তিনজন আবার রাজ্যের ‘ডিজি কমেন্ডেশন সিলভার ডিস্ক’-র জন্যও নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা পুরুলিয়া ও মেদিনীপুরের দুই পুলিশ সুপার সহ হাওড়া গ্রামীণ এসপি স্বাতী বাঙ্গালিয়া রয়েছেন। তিনি অশান্ত হাওড়াকে দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন। আলিপুরদুয়ার পুলিশ সুপারও মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ভালো কাজে যথেষ্ট ছাপ ফেলেছেন। সেই ধারা বজায় রেখেছেন উত্তরবঙ্গের ওই জেলাতেও। একইভাবে হুগলি গ্রামীণের তরুণ পুলিশ সুপার আমনদীপও ওই জেলায় প্রশংসনীয় কাজের কারণেই এই শিরোপা। পুরুলিয়ার এসপি অভিজিৎ ২০০৯ সালে মালদহে ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) থাকার সময় কালিয়াচকের নানান অপরাধ দমন করেছিলেন। একদিকে ড্রাগ সিন্ডিকেট। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক জাল নোট চক্র। এছাড়া বে-আইনি অস্ত্র উদ্ধার গ্যাংওয়ার সামলে অশান্ত জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনে স্পেশাল অপারেশন গ্রুপে এই অফিসারকে নিয়ে এসে জঙ্গলমহলে পাঠায় রাজ্য। তখন মাও খুন, নাশকতায়, পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে জ্বলছে বর্তমানের ঝাড়গ্রামের লালগড়। এরপরেই ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) হিসাবে পুরুলিয়া। তারপরই মাও অযোধ্যা স্কোয়াডের একের পর এক সদস্য তাঁর হাত ধরে গ্রেফতার হয়। মাওবাদীদের হাতে অপহরণের পরে খুন হওয়া আইবি ইন্সপেক্টর পার্থ বিশ্বাস ও শিক্ষক সৌমজিৎ বসুর ঘটনার কিনারা করেন তিনি। সেই সঙ্গে রাজ্যে পালাবদলের পর তাঁর হাত ধরেই প্রথম আত্মসমর্পণ অযোধ্যা স্কোয়াডের দুই মাও নেতা-নেত্রী দুর্যোধন রাজোয়াড় ও আঁখরি সহিস। ২০১২ সালে গ্রেফতার হয় বিক্রম। নখদর্পণে থাকা অযোধ্যা পাহাড়ের স্কোয়াডকে শেষ করে তাঁকে পাঠানো হয় এসডিপিও বারাসত। সেখান থেকে ডিএসপি হেডকোয়ার্টারে থাকাকালীন বারাসতে সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অভিযুক্ত উত্তর ২৪ পরগনার কুখ্যাত দুষ্কৃতী, তিন খুনের আসামি প্রভাস ঢালিকে ভুটান সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার। সেখান থেকে এসডিপিও বসিরহাট। আবার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের এসডিপিও। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বারাসতে মনুয়া কাণ্ডের কিনারা। তারপর এএসপি ডায়মন্ড হারবার হয়ে এসপি বারাসত। আবার ডায়মন্ড হারবার, রানাঘাট এসপি হয়ে পুরুলিয়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারও জঙ্গলমহলের আরও তিন জেলা পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম বাঁকুড়ায় ছিলেন। পুরুলিয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অভিযান) ও ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ায় এসপি হয়ে আইন-শৃঙ্খলার কাজে যথেষ্ট ছাপ ফেলেছেন। পুলিশি তদন্তে তাঁর কারিগরি দিক আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ -এ বাঁকুড়ায় তাঁর হাত ধরে ‘উত্তরণ’ ‘সুরক্ষা’র সুফল পান এই জেলার মানুষজন। হারিয়ে যাওয়া মোবাইল সহজে পেতে একের পর এক পোর্টাল বাঁকুড়ায় ‘সন্ধান’, ডায়মন্ড হারবারের ‘প্রাপ্তি’, পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘খোঁজ’ আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। তিনি বাঁকুড়ায় এসপি থাকাকালীন ২০২২ সালে বিষ্ণুপুর সেরা থানার সম্মান পেয়েছিল।