দিনের পর দিন চলছিল পাশবিক নির্যাতন। শৈশবেই সে হারিয়েছিল বাবাকে। তার কিছুদিন পরেই মা-ও তাকে ছেড়ে চলে যান। কাকা-কাকিমার কাছে থাকতে থাকতে মেয়েবেলা ক্রমশ হয়ে উঠেছিল অসহনীয়। এবার তা পৌঁছল চরমে। হুগলির গোঘাট থানা এলাকায় এক অসহায় নাবালিকার উপর অমানবিক অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আর তাতে শিউরে উঠছেন সকলে। মারধর, না খেতে দেওয়া, জোর করে কাজ করিয়ে উপোস করিয়ে রাখা, সর্বোপরি পিঠ-সহ প্রায় সারা শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকার পর ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাবালিকার কাকিমার বিরুদ্ধে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তড়িঘড়ি গোঘাট থানার ওসি শৈলেন্দ্রনাথ উপাধ্যায় নিজেই উদ্যোগ নিয়ে এই নাবালিকাকে উদ্ধার করে আনেন। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত কাকিমাকে। মেয়েটিকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থাও করেছেন ওসি।
উক্ত নাবালিকার নাম সৃজনী চট্টোপাধ্যায়। বাবা তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বেশ কয়েক বছর আগেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। আর মা-ও ১০ বছর আগেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর কোনও খোঁজ নেই। নাবালিকা সৃজনী দাদু ও ঠাকুমার কাছেই থাকত। কিন্তু দাদুও বেশ কয়েক বছর আগেই মারা যায়। বাড়িতে কাকা-কাকিমার ফাইফরমাস খেটে গোঘাটের ভগবতী বালিকা বিদ্যালয় সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে সৃজনী। প্রচন্ড কষ্ট-যন্ত্রণার মধ্যেই তার বেড়ে ওঠা। কাকা-কাকিমা কোনওদিনই সৃজনীকে সেভাবে ভালবাসেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। উলটে বাড়ির কাজ থেকে দোকান বাজার সবই এই নাবালিকা মেয়েটিকে দিয়ে করাতেন তাঁরা। কাজে সামান্য ভুল হলেই খেতে দেওয়া হত না সৃজনীকে। পান থেকে একটু চুন খসলেই ভয়বাহ নির্যাতনের শিকার হত সৃজনী। কিন্তু সেই অত্যাচারের ভয়ে কোনও প্রতিবাদ করতে পারত না সে। বাইরের কাউকেই বলতে পারত না মনের কথা। প্রবল যন্ত্রণা সহ্য করেই থাকত বাড়িতেই।
সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সারাদিন উপোস ছিল সৃজনী। সারাদিনই তাকে খেতে দেননি তার কাকা-কাকিমা। বিকেলের দিকে খিদেয় ছটফট করতে থাকে ছোট্ট সৃজনী। বাধ্য হয়েই খিদে সইতে না পেরে ফ্রিজ খুলে দুটি মিষ্টি খেয়ে নেয়। আর এতেই কাকিমা সারদামণি চট্টোপাধ্যায় ছোট্ট সৃজনীর উপর অমানবিক অত্যাচার চালান। অভিযোগ, মারধরের পাশাপাশি খুন্তি গরম করে সৃজনের পিঠে ছ্যাঁকা দেন। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে সৃজনী। ওই অবস্থাতেই বুধবার স্কুলে যায় সে। পিঠের ফোসকাগুলি গলে গিয়ে প্রবল কষ্ট হচ্ছিল তার। সৃজনীর এই অস্থিরতা চোখে পড়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার। তখনই তিনি জানতে পারেন সব ঘটনা। তড়িঘড়ি প্রধান শিক্ষিকা বিদ্যালয় থেকেই গোঘাট থানায় খবর দেন। গোঘাট থানার ওসি জানতে পেরে ছুটে যান নিজেই। তদন্ত শুরু করেন। কিশোরীর উপর অত্যাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত সারদামণি চট্টোপাধ্যায়কে প্রবল ভর্ৎসনা করেন ও তাকে গ্রেফতার করা হয়। আর নাবালিকার নিরাপত্তার কথা ভেবে অন্যত্র তাঁর থাকার ব্যবস্থা করে দেন ওসি। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সারা এলাকায়। অভিযুক্তের কঠোরতম শাস্তির দাবি করেছেন ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।