রাত পোহালেই ২১শে জুলাই। প্রতি বছরের মতো কলকাতায় ধর্মতলায় আয়োজিত হবে তৃণমূলের শহীদ দিবস সমাবেশ। বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গত ক-বছরের থেকে এবছরের একুশে জুলাই খানিকটা আলাদা। কারণ, এই মহাসমাবেশের দু’দিন আগেই বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোটের বৈঠক বসেছিল কর্ণাটকে। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রীর সোনিয়া গান্ধী ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা। আর সেই বৈঠকেই মধ্যমণি ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে এক হয়েছে ২৬টি দল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, সব আঞ্চলিক দল এক হয়েছে। সহমত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত নাম ‘ইন্ডিয়া’য়। বৈঠকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা ঈর্ষণীয়। শেষ পর্যন্ত মমতার ডাকেই সিলমোহর দিল বিরোধী জোট। “জোট চাই”, বলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি সকলের আগে ডাক দিয়েছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন এই একুশের মঞ্চ থেকেই, বলেছিলেন “দিল্লী চলো।” এই বৈঠকের প্রেক্ষিতেই আগামীকাল একুশে জুলাই। যা কার্যত তৃণমূলের বাৎসরিক সভা।
উল্লেখ্য, বিগত ১৯৯৩ সালের মহাকরণ অভিযানে বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশের গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু থেকে বহু ওঠাপড়া পেরিয়ে মমতা তাঁর লক্ষ্যে সফল। ২০১১ সালে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনে ইতি পড়ে। এরপর একযুগ ধরে চলছে মমতার সরকার। তিন-তিনবার বিধানসভা, পঞ্চায়েত জয়ের হ্যাট্রিক করেছে তৃণমূল। এবার একুশের ৩০ বছর পূর্ণ হবে। দলে দলে লোক আসবে। ভিড়ের নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলেই মনে করছে ঘাসফুল শিবির। আজ অবধি কোনও একুশে জুলাই ফ্লপ হয়নি। এমনকী তৃণমূলের চরম দুর্দিনেও নয়। ২০০৪ সালে লোকসভা ভোট একা জিতেছিলেন মমতা। তবু জনস্রোত দেখেছিল শহীদ দিবস। ২০০৬ সালের বিধানসভা বা ২৩৫, তৃণমূল মাত্র ৩০। তবুও হয়েছিল প্রবল ভিড়। সদ্য হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে কপ্টার দুর্যোগের জন্য দু’টি সভার বেশি প্রচার করতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রথম সভাতেই তিনি পরিষ্কার করে দেন যে, তাঁর পাখির চোখ ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচন। বলেছিলেন, দিল্লীর মসনদ থেকে বিজেপি সরকারকে না সরাতে পারলে শেষ হবে না বাংলার অর্থনৈতিক অবরোধ। একশো দিনের কাজ থেকে নানা প্রকল্পে কেন্দ্রের অর্থের বঞ্চনা করার কথা বারবার উল্লেখ করেছেন মমতা। সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রের বাংলাবিরোধী মানসিকতার বিরুদ্ধে। সুর চড়িয়েছিলেন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি থেকে জিএসটি-সহ একাধিক ইস্যুতে। সেই প্রেক্ষিতে একুশের সভা থেকে মমতা কী বলবেন, তা খানিক পরিষ্কার। আরও একটি রাজনৈতিক দিক রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিরোধী জোটের যা পরিসংখ্যান, তাতে কংগ্রেস এককভাবে ম্যাজিক ফিগার পার করতে সক্ষম হবে না। সেই প্রেক্ষিতে ২৬ দলের মিলিত শক্তির উপরেই ভর করে আছে নতুন জোট ‘ইন্ডিয়া’। যার যত বেশি আসন, তার তত বেশি গুরুত্ব। তাই মমতা নিজের অঙ্ককে পরিপাটি করে রাখতে নেমে পড়েছেন। বরাবরের মতো বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশই তাঁর লক্ষ্য। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে একুশের মঞ্চ থেকে সেই অঙ্গীকারই নেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো।