পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিপুল জয়কে কাউন্টার করতে একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করিয়েছিল বামেরা। সেখানে উল্লেখ, ১০ জুলাই ৬৯৬ বুথের পুনর্নির্বাচনের বেশিরভাগ আসনেই জয়ী সিপিআইএম প্রার্থীরা। তালিকায় কাস্তে-হাতুড়ির পরে রয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস। পুননির্বাচনের ভাইরাল ওই পরিসংখ্যান ঘিরে বঙ্গ রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়।
গত ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের পর ৬৯৬টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন৷ প্রতিটা বুথে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই পুনর্নির্বাচনেই তৃণমূল ১০০ আসনও পায়নি বলে দাবি করে লেফট ফ্রন্ট ডেইলি নামের একটি ওয়েব পেজে৷ সেখানে বলার চেষ্টা করা হয়, সচ্ছ নির্বাচন হলে তৃণমূলকে হারবে, বামেরা জিতবে।
লেফট ফ্রন্ট ডেইলি-র দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, পুননির্বাচন হওয়া ৬৯৬ বুথের মধ্যে ৬৯৫টি বুথের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে সিপিএম ৩৮০টি, কংগ্রেস ১২২, বিজেপি ৯১টি ও তৃণমূল পেয়েছে ৬৫টি। এছাড়া, আইএসএফ ও অ্যান্যরা পেয়েছে ৩৮টি। এই পোস্ট রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সিপিএম কর্মীরা লিখতে শুরু করেন, ‘অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার সময়ের অপেক্ষা’। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ‘সত্য’ চাপা থাকেনি।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান সামনে আসতেই দেখা যায় লেফট ফ্রন্ট ডেইলি-র দাবি ভুয়ো। বাস্তবে ৭৬২ বুথে পুননির্বাচন হয়েছে। ৬৯৬ এর সঙ্গেই আরও ৬৬টি আসন বুথে ভোট হয়। এই ৬৬টি বুথ ডবল সিট অর্থাৎ একই প্রাঙ্গনে দু’টি বুথ ছিল। কমিশন সূত্রে দেওয়া পরসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, পুননির্বাচন হওয়া ৭৬২ বুথের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ৪৭০টি আসনে৷ বিজেপির দখলে গিয়েছে ১০৩টি আসন, কংগ্রেস ৯১ এবং সিপিএম ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছে৷ এর পাশাপাশি নির্দল প্রার্থীরা ২৬টি এবং অন্যান্যরা ১০টি আসনে জয়ী হয়েছে৷ অর্থাৎ ফলের নিরিখে চার নম্বরে রয়েছে বামেরা৷
অর্থাৎ যে সিপিএম নিজেদের প্রথম বলে দাবি করছিল, আসলে তারা চতুর্থ। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোড়া পুনর্নির্বাচনে বিজেপি ও কংগ্রেসের চেয়েও খারাপ ফল হয়েছে তাদের। যা দেখে অনেকে ব্যাঙ্ক করে বলছেন, ৩৪ বছর ছাপ্পা মারার পর ফেসবুকেও ছাপ্পা মেরে ফল প্রকাশ করেছে বামেরা। ঘরোয়া আলোচনায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কেষ্টবিষ্টুরাও বলছেন, ব্যাপারটা ব্যুমেরাং হয়ে গেল। সিপিআইএমের অনেক কর্তাব্যক্তিও এই পোস্ট নিজেদের টাইমলাইনে শেয়ার করেছিলেন। কমিশনের ফল প্রকাশ্যে আসতেই তাঁরা ডিলিটও করে দেন। অবশ্য ভূতের ভবিষ্যৎ খ্যাত পরিচালক অনীক দত্তের মতো অনেকের টাইমলাইনে এই পোস্ট এখনও দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন হল, সিপিএম সমর্থকরা ভুয়ো তথ্য কেন ছড়াতে গেল? এই নিয়ে দলের উপরের তলার নেতারা অস্বস্তিতে। তাঁরা বলছেন, ভুয়ো তথ্যে মুখ তো পুড়লই যেটুকু ভোট শতাংশ বেড়েছিল, এই আলোচনায় সেটাও চাপা পড়ে গেল। আর ‘সত্য’ সামনে আসার পর নেটিজেনরা বলছেন, দীর্ঘদিন জয়ের স্বাদ না পাওয়া সিপিএম কর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়াতেই সরকার গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু হায়, মাঠে মারা গেল তাও!