বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর রাজ্যবাসীর জন্য একাধিক জনমুখী প্রকল্পের সূচনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষক বন্ধু, বিনামূল্যে রেশন ইত্যাদি সরকারি প্রকল্পগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিশ্বদরবারে বিশেষ সম্মান অর্জন করেছে কন্যাশ্রী। প্রকল্পগুলির কল্যাণে বাংলার গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবন যে সচ্ছ্বল ও সাবলীল হয়ে উঠেছে, তা বলাই বাহুল্য। মাসের শুরুতে যে কোনও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের দফতরে গেলেই জানা যায় যে, এসব প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন কত কত জন। ফের প্রকাশ্যে এল এর সুফল। স্বল্প সঞ্চয়ে সারা দেশে আরও একবার সেরা হয়েছে বাংলা। এ যদিও নতুন কোনও খবর নয়। গত কয়েক দশকে বহুবারই বাংলা স্বল্প সঞ্চয়ে দেশে শীর্ষস্থানে থেকেছে। এবারের খবরটা হল, স্বল্প সঞ্চয়ে অর্থ জমার ক্ষেত্রে বাংলা নজির গড়েছে। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে বাংলা থেকে স্বল্প সঞ্চয়ে জমা পড়েছে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটা সবদিক দিয়ে রেকর্ড। অতীতে কখনও কোনও রাজ্য থেকে একবছরে এত পরিমাণ অর্থ স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে জমা পড়েনি। ঠিক এর আগের অর্থবর্ষে, অর্থাৎ ২০২০-’২১ সালে বাংলা থেকে স্বল্প সঞ্চয়ে জমা পড়েছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ের সিংহভাগ জুড়েই দেশে লকডাউন ছিল। কোভিড পরিস্থিতি উতরে একবছরে রাজ্যে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। যা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপভোক্তারা যে গ্রামীণ এলাকার মানুষ, তা নিয়ে সংশয় নেই। গ্রামীণ এলাকার মানুষই ডাকঘরে গিয়ে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমা রাখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। ফলে, এটা বললে অত্যুক্তি হয় না যে, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে এই রেকর্ড রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল ছবি তুলে ধরে। স্বল্প সঞ্চয়ে বাংলার এই সাফল্য কেন, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা বিভিন্ন সময় হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে যখন গোটা দেশের অর্থনীতি একটা বিপর্যয়ের মধ্যে ছিল, তখনও গ্রামবাংলার মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা ও প্রবণতা যে কমেনি, তা নতুন গবেষণা শুরুর দাবি রাখছে। এ প্রসঙ্গেই আরও বিশেষভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেওয়া বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষক বন্ধু, বিনামূল্যে রেশন ইত্যাদি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে গ্রামের পাশাপাশি প্রভূতভাবে উপকৃত শহরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষও। মাসের শুরুতে যে কোনও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের দফতরে গেলেই তা বোঝা যায়। পাসবই আপডেট করার মেশিনের সামনে লেগে থাকে দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়ানো মানুষের সিংহভাগই প্রান্তিক সম্প্রদায়ের। কিছুদিন আগেও এই সমস্ত মানুষকে ব্যাঙ্কের দরজায় দেখা যেত না। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সফল রূপায়ণই যে এদের ব্যাঙ্ক পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, তা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে মাসে ৬-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত সাহায্য পায় কোনও কোনও গ্রামীণ পরিবার।
সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের সাফল্যের পিছনে অন্যতম বড় কারণ রাজ্য সরকারের চালু করা প্রকল্পগুলির জনপ্রিয়তা। যা গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে ধরে রেখেছে। পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দল তথা তৃণমূলের এই সাফল্যকেই সমর্থন করছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে রাজ্যের সাম্প্রতিক রেকর্ড। গ্রামীণ এলাকায় মানুষের হাতে অর্থ আসছে বলেই তারা সঞ্চয়ে উৎসাহী। রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় মানুষের হাতে টাকাপয়সা থাকার বিষয়টি আগেই গোটা দেশের নজর কেড়েছে। সে-কারণে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ব্যবসায় আগ্রহী দেশের অধিকাংশ বড় বড় আর্থিক সংস্থা। বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসন ব্যবস্থায় কৃষকদের সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। প্রান্তিক কৃষকদের একটা বড় অংশ ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে পাওয়া জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। ভূমিহীনদের সংখ্যা বেড়েছিল। বাম আমল থেকেই বেড়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা। কারণ, এই রাজ্যে শিল্প শ্রমিক হওয়ার সুযোগ ভীষণভাবে কমেছিল বাম আমলেই। ক্ষমতায় এসে কাজ-হারা এই প্রান্তিক মানুষের সাহায্যেই দারুণভাবে এগিয়ে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিও স্বস্তি দিয়েছে সাধারণ মানুষকে।